সিলেটে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে নগরের জালালাবাদ থানায় নিহতের ভাই মইনুল হক বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, মামলায় আসামি হিসেবে আজিজুর রহমান সম্রাটসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও চার থেকে পাঁচ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের নাম বলতে চাননি তিনি।
মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান আজবাহার।
এরআগে রবিবার (৬ নভেম্বর) রাত ৯ টার দিকে সিলেট নগরের আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং সিলেট ল’কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি আ ফ ম কামাল।
কামালের বাড়ি সিলেট শহরতলীর জালালাবাদ ইউনিয়নের আলীর গাঁওয়ে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মহানগরের সুবিদবাজারে বসবাস করছিলেন।
আরও পড়ুন: বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা স্থগিত
ব্যবসায়িক বিরোধে কামাল খুন হতে পারেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে। আর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল সিলেট বিমানবন্দর এলাকা থেকে আম্বরখানা বড়বাজার হয়ে গোয়াইটুলার দিকে যাচ্ছিলেন। তার গাড়িকে অনুসরণ করছিল দু’টি মোটরসাইকেল।
বড়বাজার ১১৮ নং বাসার সামনে কামালের গাড়ির গতিরোধ করে বাইক আরোহীরা। পরে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা কামালকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই কামাল মারা যান জানিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামছুল ইসলাম বলেন, কামালের দেহে ২৫টি ছুরিকাঘাত করা হয়। তার বাঁ হাতে ১৬টি, বাম বগলের নিচে দুইটি, বুকের বামপাশে একটি ও বাম পায়ে ছয়টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আ ফ কামাল খুনের ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয় পাঁচজন। এরমেধ্য আজিজুর রহমান সম্রাট, শাকিল ও রাজু নামের তিনজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে এই সূত্র।
এদের মধ্যে সম্রাট ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, আ ফ ম কামাল রাজনীতির পাশাপাশি পাথর ব্যবসা এবং নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি তার ট্রাভেল এজেন্সি থেকে আজিজুর রহমান সম্রাটের আত্মীয়কে সৌদি আরবে পাঠানো নিয়ে দ ‘জনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সম্রাট গত ২১ অক্টোবর আ ফ ম কামালসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
এরই জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, আ ফ ম কামাল হত্যার জেরে সিলেটে ছাত্রদলের মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুরের ঘটনায় চার জনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার রাত ও মঙ্গলবার দিনে কতোয়ালি থানা পুলিশ তাদের আটকের পর মঙ্গলবার বিকেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার ইশতিয়াক আহমদ রাজু, বদরুল ইসলাম নজরুল, মিলাদ আহমদ ও রাজীব আহমদ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুরের ঘটনায় চার জনকে আটক করা হয়েছে।
তবে এঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তাই ৫৪ ধারায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা