বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে দিন-দিন করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ওই জেলাগুলোর হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জটিল পরিস্থিতি সামাল দেবার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি নেই।
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সেবার অভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে, তা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া ওই সকল জেলাগুলোতে প্রশাসন লকডাউন এবং দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ না করে সময় নষ্ট করছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের উচিৎ সীমান্তবর্তী জেলা হতে পাশের জেলাগুলোতে যেন করোনা সংক্রমণ না ছড়ায় সেই ব্যবস্থা নেয়া। এর পাশাপাশি, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বেড, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, অক্সিজেনসহ অন্যান্য কোভিড চিকিৎসা সামগ্রীর সরবরাহ বৃদ্ধি করা।
আরও পড়ুন: বিশ্ব করোনা: আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৭ কোটি ১৫ লাখে
মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর, নওগাঁ এবং নাটোর জেলাতে ব্যাপক হারে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, এসকল জেলার কয়েকটিতে ভারতফেরত বাংলাদেশিদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ভারতের করোনার যে ধরন, তাতে একজন সংক্রমিত ব্যক্তি প্রায় ৪০৬ জনকে এক মাসে আক্রান্ত করতে পারে।
তবে, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন দেয়ার ক্ষমতা দিলেও, এখন পর্যন্ত শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় লকডাউন দেয়া হয়েছে।
যশোর
দেশের সর্ববৃহৎ স্থল বন্দর জেলার বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিনই প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন বাংলাদেশি দেশে প্রবেশ করছেন। ইতোমধ্যেই ভারতফেরত এই যাত্রীদের মধ্যে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে।
বর্তমানে যশোরে করোনা শনাক্তের হার ২৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন: সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুদ আছে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সাতক্ষীরা
যদিও জেলার ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে যাত্রী চলাচল স্থগিত করা হয়েছে, কিন্তু সাতক্ষীরায় বর্তমান করোনা শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ। এই জেলাটিতে মাত্র ৩৫ টি আইসোলেশন বেড এবং ৮৮টি সাধারণ বেড রয়েছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্তা থাকলেও, জেলার সদর হাসপাতালে এই সুবিধা নেই।
কুষ্টিয়া
ভারতের সাথে কুষ্টিয়া জেলার দীর্ঘ ৪৫ কি.মি. সীমান্ত থাকায় এখানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। গত ১০দিনে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ। কুষ্টিয়ায় মাত্র ১১৫ টি আইসোলেশন বেড রয়েছে।
নওগাঁ
বৃহস্পতিবারের পাওয়া শেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ১৯৭ জনের করোনা পরীক্ষা করে ৬৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৩৪.১ শতাংশ।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর জেলাগুলোতেও আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে করোনা রোগী।
আরও পড়ুন: দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৩৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত বেড়েছে
প্রস্তুতি
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর করোনা মোকাবিলা প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, সীমান্তঘেষা জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার দিন-দিন বাড়ছেই।
তিনি জানান, জেলা পর্যায়ে এবং মেডিকেল কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় করোনা সংক্রমণ হলে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক বলেন, সরকারের উচিৎ এখনই সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে প্রস্তুত রাখা।
তিনি সতর্ক করে জানান, এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করা না গেলে পরবর্তীতে যেকোনও বিপর্যয় ঘটতে পারে।
করোনা মোকাবিলায় জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, উপদেষ্টা কমিটি সরকারকে সীমান্তবর্তী ও ঝুঁকিপূর্ণ আট জেলায় লকডাউন দেয়ার সুপারিশ করেছে। কিন্তু এখনও সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি।
যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতি জোর দেন এই বিশেষজ্ঞ।