সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বরিশাল, চাঁদপুর, লালমনিরহাট ও ঝিনাইদহসহ বেশ কিছু জেলায় উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা।
সোমবার (১৭ জুন) দেশব্যাপী ঈদ উদযাপনের একদিন আগে রবিবার (১৬ জুন) এসব জেলায় ঈদ উদযাপন করা হয়।
বরিশালে পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার পরিবার আজ ঈদ উদযাপন করছে।
জেলার প্রায় অর্ধশত মসজিদে সকালে জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পশু কোরবানি দেওয়া হয়।
নগরীর সাগরদীর তাজকাঠী মিয়াবাড়ী এলাকার জাহাগীরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়ার ইমামতিতে অনুষ্ঠিত নামাজে অংশ নেন কয়েকশ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আমীর হোসেন জানান, আশপাশের প্রায় ৫০০ পরিবার রবিবার ঈদ উদযাপন করছে।
একইভাবে বরিশাল নগরীসহ জেলার প্রায় অর্ধশত মসজিদে চন্দনাইশ দরবারের অনুসারীরা আগাম ঈদ উদযাপন করছে।
এছাড়া বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা, কেদারপুর, মাধবপাশাসহ ৫-৬টি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারে আগাম ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।
জেলার মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় এবং বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, পতাং, লাহারহাট গ্রামে আড়াই ২ হাজার মানুষ এদিন ঈদ উদযাপন করছে।
আগাম ঈদ পালনকারীরা চট্টগ্রামের চন্দনাইশের জাহাগীরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারী।
পৃথিবীর কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে তার সঙ্গে মিল রেখে তারা রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাসহ ধর্মীয় আচার পালন করেন।
অন্যদিকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ সাদ্রা দরবার শরীফসহ জেলার কমপক্ষে ৪০ গ্রামে ঈদ উদযাপন চলছে।
সকাল ৯টায় সাদ্রা দরবার শরীফ সংলগ্ন হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার মাঠে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরীফের পীরজাদা আরিফুল্লা মিশকাত চৌধুরী।
সাদ্রা দরবার শরীফের পীরজাদা আরিফুল্লা মিশকাত চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, ১৯২৮ সাল থেকে তারা মুসলিম বিশ্বের সাথে কয়েক ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ঈদুল ফিতর-ঈদুল আজহা এবং পবিত্র রমজানের রোজা রেখে আসছেন।
দরবার শরীফে ঈদের নামাজ পড়তে আসা মুসল্লী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও আ. হামিদ জানান, মরহুম পীর সাহেবের সময়কাল থেকে আমরা এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছি। আমরা মনে করি গতকাল সৌদি আরবে হজ পালন হয়েছে। আজকে তারা ঈদ উদযাপন করছে, আমরাও তাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছি। এতে আমরা খুবই আনন্দিত।
একই সঙ্গে জেলার অন্যান্য গ্রামগুলোতে এই মতবাদের অনুসারীরা ঈদের নামাজ আদায় ও কোরবানি করছে।
এছাড়াও লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের অর্ধশত পরিবার আজ (১৬ জুন) ঈদ উদযাপন করছে।
সকাল ৯টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপুর উত্তর বালাপাড়া পানি খাওয়া ঘাট জামে মসজিদে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আতিকুর রহমান।
প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার, সুন্দ্রহবী, চন্দ্রপুর ও মুন্সীপাড়া গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবারের মুসল্লিরা ঈদ উদযাপন করেন।
মাওলানা আতিকুর রহমান বলেন, সহি হাদিসের আলোকে অনেক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চন্দ্রপুর উত্তর বালাপাড়া পানি খাওয়ার ঘাট জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ জামাতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশত মুসল্লি অংশ নেন।
উত্তর বালাপাড়া ঈদগাহ মাঠের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বিগত কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবে-কদর, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত (ওসি) ইমতিয়াজ কবির জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে অনেক আগে থেকে চলবলা-তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি, চন্দ্রপুর ইউনিয়নের পানি খাওয়ার ঘাট এলাকায় কিছু পরিবার ঈদের নামাজ আদায় করেন।
পাশাপাশি দিনাজপুরের সদর চিরিরবন্দরসহ ৬টি উপজেলায় প্রায় ২ হাজার পরিবার আজ ঈদ উদযাপন করছে।
সকাল ৮টায় জেলা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত ঈদের নামাজে অংশ নেন শতাধিক অনুসারী পরিবার। এতে ইমামতি করেন বিরলের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক।
এছাড়াও চিরিরবন্দরের সাইতাড়া রাবার ড্যাম, ফতেজংপুর, কাহারোলের জয়নন্দ ১৩ মাইল গড়েয়া, বিরলের বনগাঁও জামে মসজিদে এবং বিরামপুরের বিনাইল ইউনিয়নের আয়রা বাজার জামে মসজিদ ও জোতবানী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি মির্জাপুর জামে মসজিদসহ কয়েকটি স্থানেও ঈদের নামাজ আদায় করা হয়।
সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ২০০৭ সাল থেকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে আসছেন দিনাজপুরের এসব মানুষ।