ধুঁকতে থাকা স্বাস্থ্য খাতের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সামান্য বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণের অগ্রগতি বজায় রাখতে ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।’
২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা ছিল বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৪-২৫: স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা
নতুন বরাদ্দে মোট বাজেটের ৫ দশমিক ২ শতাংশ পেয়েছে স্বাস্থ্য খাত এবং তা জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের অন্যতম মূলনীতি। আমরা এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। বিশেষ করে, আমরা জনসাধারণকে সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবারকল্যাণ পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে একটি সুস্থ, শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত জনসংখ্যা গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবারকল্যাণ খাতের উন্নয়নে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে সরকার।
‘সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে, আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জন এবং স্মার্ট স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।’
গত দেড় দশকে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘২০০৭ সালে লাখপ্রতি মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ৩৫১ জন, যা বর্তমানে ১৩৬ জনে নেমে এসেছে।’
তিনি বলেন, ২০০৭ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ৬০ জন, যা বর্তমানে ৩৩ জনে নেমে এসেছে। ওই বছর নবজাতক মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ২৯টি, যা বর্তমানে কমে ২০-এ দাঁড়িয়েছে। ২০০৭ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৬ দশমিক ৬ বছর, যা এখন ৭২ দশমিক ৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।
তিনি জানান, বিভিন্ন গুরুতর ছোঁয়াচে রোগ থেকে নারী ও শিশুদের রক্ষায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) অব্যাহত রেখেছে সরকার।
এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল থেকে শুরু করে কমিউনিটি ক্লিনিক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীদের ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। সব নাগরিককে অভিন্ন স্বাস্থ্য পরিচয়পত্রসহ স্বাস্থ্যকার্ড দেওয়ার মাধ্যমে একটি ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য ডাটাবেস তৈরি করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৪-২৫: স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা
স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক ও মানসম্মত স্বাস্থ্য শিক্ষা অপরিহার্য উল্লেখ করে মাহমুদ আলী বলেন, ‘মেডিকেল ও নার্সিং শিক্ষা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উন্নত ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।’
‘মেডিকেলের সমস্ত স্নাতকোত্তর ডিগ্রিকে এক প্ল্যাটফর্মের অধীনে আনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষা পদ্ধতির আধুনিকীকরণ করা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো পরিকল্পনাগুলো উল্লেখযোগ্য।’
গত ১৫ বছরে মেডিকেল ইনস্টিটিউটের সংখ্যা এবং আসন উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে দেশে মাত্র ৫৯টি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, যা এখন বেড়ে ১১১টি হয়েছে। এছাড়া ১৩টি ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিট থেকে বেড়ে ৩৫টি হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, “ওষুধের মৌলিক ও ফলিত গবেষণার অবকাঠামো তৈরি, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, স্বাস্থ্য খাতে উদ্ভাবনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য ‘সমন্বিত স্বাস্থ্যবিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিলে’ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বাজেটে আমি এই খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষায়িত ও দক্ষ জনশক্তি (মেডিকেল টেকনিশিয়ান, বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি) তৈরির লক্ষ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা বিশেষ প্রযুক্তি বা ডিভাইস, অপারেশন ও অন্যান্য দরকারি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিযুক্ত থাকবেন।’
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৪-২৫: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে