দেশের রাষ্ট্রচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার প্রস্তাবের পর কর্তৃপক্ষ ১৪ অক্টোবরের আগে যে কোনো সময় সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে।
রবিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে অক্টোবর মাসের জন্য এলপিজির নতুন দাম কমানোর বিষয়ে একথা বলেন।
তবে বাল্ক বিদ্যুতের শুল্কের কোনো সমন্বয় বিদ্যুতের বর্তমান খুচরা মূল্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বিইআরসি আইন অনুযায়ী বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সংক্রান্ত বিষয়ে গণশুনানির পর ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার বিধান রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাবের ওপর সর্বশেষ গণশুনানি হয় ১৮ মে।
আরও পড়ুন: ৫ বছরে রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা তিনগুণ বাড়বে: প্রতিমন্ত্রী
গণশুনানির সময় বিপিডিবি বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, যখন বিইআরসি-এর একটি প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল।
কিন্তু গণশুনানির পর, বিইআরসি অংশীজনদের শুনানির প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য প্রাসঙ্গিক নথি জমা দেয়ার জন্য অতিরিক্ত দিন বাড়িয়েছে।
বিইআরসির এক সদস্য জানান, এই অতিরিক্ত সময়ের সঙ্গে বিইআরসি এখন ৯০ দিন গণনা করছে এবং নির্ধারিত সময় ১৪ অক্টোবর শেষ হবে।
যে কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে অংশীজনদের যুক্তি ও পাল্টাযুক্তি শুনে পাঁচ সদস্যের কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
যদিও এই সমন্বয়ে বাল্ক বিদ্যুতের ওপর প্রভাব ফেলবে না। তবে এটি অবশ্যই বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর ওপর প্রভাব ফেলবে। যারা বিপিডিবি থেকে তাদের খুচরা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ কিনে থাকে।
একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যদি নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে কোনও ঊর্ধ্বমুখী সমন্বয় আসে, তাহলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেবে, যা গ্রাহকদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
১৮ মে গণশুনানিতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার প্রতিনিধিসহ ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠীগুলো শুনানিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির তীব্র বিরোধিতা করেছিল। কেননা মূল্যবৃদ্ধির ফলে আগে থেকেই মানুষ ধুঁকছে।
ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠীগুলো এ প্রস্তাবটিকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে বলেন, বিপিডিবি অদক্ষ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক চর্চা দূর করে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে, বিপিডিবি কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে সংস্থাটির বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে সরবরাহ করতে ৮৮ হাজার ৯৯৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘন্টা (ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা রাজস্বের প্রয়োজন হবে।
শুনানিতে বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কিন্তু যদি বিপিডিবি তার বর্তমান বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ১৭ পয়সায় বিক্রি করে, তাহলে ২০২২ সালে তাকে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই, বিপিডিবিকে বিদ্যুতের দাম ৬৫ টাকা ৫৭ পয়সা বৃদ্ধি করতে হবে। ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ইউনিট প্রতি ৮ টাকা ৫৬ পয়সা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে চুরি করা বিদ্যুতে চলছে ৫০ হাজার অটোরিকশা