২০২১ সালে সারা দেশে মোট পাঁচ হাজার ৩৭১ টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এসময় নিহত হয়েছেন ছয় হাজার ২৮৪ জন এবং আহত হয়েছেন সাত হাজার ৪৬৮ জন। দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে ৯২৭ নারী,৭৩৪ শিশু।
এর মধ্যে দুই হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুই হাজার ২১৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। দুর্ঘটনায় এক হাজার ৫২৩ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৯৮ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এই সময়ে ৭৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৫৯ জন নিহত, ১৯২ জন আহত এবং ৪৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। ঝালকাঠির সুগন্ধ্যা নদীতে একটি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৫১ জন নিহত, ২৩ জন চিকিৎসাধীন এবং অজ্ঞাত সংখ্যক নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়ার ঈদে ঘরমুখো যাত্রায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরি ঘাটে তাড়াহুড়া করে নামার সময় ছয়জন নিহত এবং ৩১ জন আহত হয়েছে। ১২৩ টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত এবং ৩৯ জন আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: পিকনিক থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
যানবাহনভিত্তিক দুর্ঘটনায় নিহতের চিত্র:
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী দুই হাজার ২১৪ জন (৩৫ দশমিক ২৩শতাংশ), বাস যাত্রী ৩৮৯ জন (৬ দশমিক ১৯শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি যাত্রী ৪৫৭ জন (৭ দশমিক ২৭শতাংশ), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ যাত্রী ২৭৬ জন (৪ দশমিক ৩৯শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পু-লেগুনা) ৯৩৪ জন (১৪.৮৬শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-চান্দের গাড়ি-বোরাক-মাহিন্দ্র-টমটম)৩৫৯ জন (৫ দশমিক ৭১শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-ঠেলাগাড়ি আরোহী ১৩২ জন (২ দশমিক ১০শতাংশ) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে দুই হাজার ১৪ টি (৩৮ দশমিক ৪৯শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, এক হাজার ৬৭০ টি (৩১ দশমিক ০৯শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৯৫৪ টি (১৭ দশমিক ৭৬শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৬৬৫ টি (১২ দশমিক ৩৮শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬৮ টি (১ দশমিক ২৬শতাংশ)দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনার ধরন:
দুর্ঘটনাগুলোর এক হাজার ৫৭ টি (১৯ দশমিক ৬৭শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক হাজার ৮১৩ টি (৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, এক হাজার ৫৬৬ টি (২৯ দশমিক ১৫শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৮২২ টি (১৫ দশমিক ৩০শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১৩ টি (২ দশমিক ১০শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-কন্টেইনার ২৪ দশমিক ৮২ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-তেলবাহী ট্যাংকার-লং ভেহিকেল ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পুলিশ পিকআপ-জীপ ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা-টেম্পু) ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-চান্দের গাড়ি-মেসিগাড়ি-আলগানন) ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং অন্যান্য মোটরযান ০ দশমিক ৫৮ শতাংশ (কোস্ট গার্ডের ট্রাক, রেকার, ডিসিসি’র ময়লাবাহী ট্রাক, হ্যান্ড ট্রলি, ডাম্পার, পাওয়ারটিলার, মাটি কাটার ট্রাক্টর, ইটভাঙ্গার মেশিন গাড়ি, রোড রুলার, রোড কাটার মেশিন, নির্মাণ সামগ্রীর মিকচার মেশিন)।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা আট হাজার ৩১৫টি। (ট্রাক এক হাজার ৪২৬, বাস ৮১৩, কাভার্ডভ্যান ২৫৪, পিকআপ ৩৭৯, ট্রলি ১৬৭, লরি ৮৩, ট্রাক্টর ১৩২, মাইক্রোবাস ১৯৭, প্রাইভেটকার ১৫৫, এ্যাম্বুলেন্স ৬৬, জীপ ১৮, মোটরসাইকেল ২১২৯, পুলিশ ও র্যাবের পিকআপ ১৬, ড্রাম ট্রাক ২৪, তেলবাহী ট্যাংকার ১৩, লং ভেহিকেল ৪, কন্টেইনার ৫, থ্রি-হুইলার ১৫১৩ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা-টেম্পু), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৬৯১ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু- পাখিভ্যান- বোরাক-মাহিন্দ্র-টমটম-চান্দের গাড়ি- মেসিগাড়ি- আলগানন), বাইসাইকেল- প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-ঠেলাগাড়ি ১৮১ এবং অন্যান্য মোটরযান ৪৯টি (কোস্টগার্ডের ট্রাক ২, রেকার ৪, ডিসিসি’র ময়লাবাহী ট্রাক ৫, হ্যান্ডট্রলি ৩, ডাম্পার ৭, পাওয়ারটিলার ৯, মাটি কাটার ট্রাক্টর ৩, ইটভাঙ্গার মেশিন গাড়ি ৪, রোড রুলার গাড়ি ৩, রোড কাটার মেশিন গাড়ি ২, নির্মাণ সামগ্রীর মিকচার মেশিন গাড়ি ৩ টি)।
আরও পড়ুন: পাবনায় সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলের মৃত্যু
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৩১৫টি (৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ), সকালে এক হাজার ৬৪১টি (৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ), দুপুরে ৯৩৬টি (১৭ দশমিক ৪২ শতাংশ), বিকালে এক হাজার পাঁচটি (১৮ দশমিক ৭১ শতাংশ), সন্ধ্যায় ৪৮৯টি (৯ দশমিক ১০ শতাংশ) এবং রাতে ৯৮৫টি (১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ)।