নারায়ণগঞ্জ নগরীর পশ্চিম মাসদাইরের একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় মুখোমুখি দুটো ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন জাহানারা মুক্তা। ভাড়ার ফ্ল্যাট দুটোর একটিতে তিনি নিজে থাকেন। তিন কক্ষের অপর ফ্ল্যাটটি রেখেছেন তার তার ৮০ সন্তান। মানব সন্তান নয় ‘বিড়াল সন্তান’। ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতেই বিড়ালগুলোকে আপন মনে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।
মুক্তা জানান, শৈশব থেকেই বিড়ালের প্রতি আলাদা মমত্ববোধ তৈরি হয়।
পরিবারের লোকজনও বাড়িতে বিড়াল পুষতেন জানিয়ে মুক্তা বলেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তেমন পছন্দ করে না। এ ছাড়া পেশাগত ব্যস্ততার কারণে বিড়াল পালন থেকে দীর্ঘ বছর বিরত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বিড়ালদের নতুন ঠিকানা ‘লিটল হুইস্কার ফোস্টার হোম’
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে ছোট মেয়ের আবদার ও স্বামীর সম্মতিতে বিড়াল পালন শুরু করি।’
এরপর থেকে পথে-ঘাটে দুর্ঘটনায় আহত বিড়াল দেখলেই বাড়িতে এনে সেবা করে সারিয়ে তুলে নিজের কাছে রেখে দিতেন। এভাবেই একে একে বিড়ালের সংখ্যা ৮০ তে দাঁড়ায়।
মুক্তা আরও বলেন, ‘আমাদের পুরো পরিবার ছিল পশুপ্রেমী। বাড়িতে ৮-১০টা বিড়াল ছিল।’
বর্তমানে মুক্তার দুই কন্যা থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। বড় কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস মিফতি মাইক্রোসফট কোম্পানিতে চাকরি করেন আর ছোট কন্যা আফিয়া জাহিন মাহিয়া কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছেন। গত আগস্টে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্বামী আমজাদ তালুকদার। এখন কন্যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুক্তা। তবে বিদেশে যাওয়ার আগে ‘সন্তানতুল্য’ বিড়ালগুলোর একটা ব্যবস্থা করে যেতে চান। প্রকৃত বিড়ালপ্রেমীদের কাছে প্রাণীগুলো দত্তক দিতে চান তিনি।
১৭ অক্টোবর ফেইসবুকে বিড়ালপ্রেমীদের একটি গ্রুপে ‘বিড়াল দত্তক দেওয়ার বিষয়টি’ উল্লেখ করে পোস্ট দেন মুক্তার পরিচিত নাদিয়া নামে এক নারী।
নাদিয়ার এই পোস্ট রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর থেকেই ফোনের পর ফোন আসতে থাকে জাহানারা খানম মুক্তার কাছে।
মুক্তা বলেন, ‘অনেক আমাকে ফোন দিয়ে বিড়াল দত্তক নিতে চাচ্ছেন। তবে সবাইকে দিচ্ছি না।’
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় বিড়ালের র্যাম্প শো
মুক্তা বলেন, ‘বিড়ালগুলো যাতে ভালো থাকে, ওদের যত্ন যারা নেবেন, তাদের বাছাই করে আমি বিড়ালগুলো দিচ্ছি। কেননা, আমার অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না। একবার একজনকে পাঁচটা বিড়াল দিয়েছিলাম, কিন্তু কয়েকদিন পরই জানান, বিড়ালগুলো তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। এরপর থেকে আর কাউকে দেইনি।’
৮০টির মধ্যে এ পর্যন্ত তার ৪০টি বিড়াল বিভিন্ন জন এসে নিয়ে গেছেন। তবে বিড়ালগুলোর বিষয়ে তিনি নিয়মিত খোঁজ-খবর নেবেন বলে জানান।
তিনি যে এলাকায় থাকেন ওই এলাকার অন্তত পাঁচটি স্থানে বেওয়ারিশ বিড়ালদের জন্য খাবার দেন। আশেপাশের অন্তত ৩৫টি বিড়াল নিয়মিত তার হাতের খাবার খায় বলে দাবি তার।
মুক্তা বলেন, ‘বিড়ালের বাচ্চার মিউ মিউ শব্দ আমার কাছে শ্রেষ্ঠ মিউজিক। আমি কখনই ওদের খাবার না দিয়ে নিজে খাই না। ওদের স্বাস্থ্যগত দিকে খেয়াল রাখার জন্য চিকিৎসকেরও নিয়মিত পরামর্শ নেই।’
ফেইসবুকে পোস্ট দেখতে পেয়ে মুক্তার কাছ থেকে দুটো বিড়াল দত্তক নিয়েছেন ঢাকার মাতুয়াইলের গৃহিণী নাজমা বেগম। বিড়াল নিতে আসেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুরের দ্বাদশ শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান সোয়াদও।
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার বাসায় বিড়াল পুষি। ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেখে আমি আন্টির (মুক্তা) কাছ থেকে একটি বিড়াল নেওয়ার জন্য এসেছি। সঙ্গে আমার বন্ধুরাও এসেছে।’
আরও পড়ুন: বিড়ালের র্যাম্প শো!