সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ খুলনার সুন্দরবন উপকূলবর্তী এ উপজেলা নদী দ্বারা বেষ্টিত। উপজেলার অন্যতম নদ-নদীর মধ্যে কাজিবাছা, ঝপঝপিয়া, মাঙ্গা, ভদ্রা, শৈলমারী নদী উল্লেখযোগ্য। গত ৩-৪ বছর নদ-নদীগুলোর অব্যাহত ভাঙনে নদীর উপকূলবর্তী বসতিরা ভিটেমাটি হারিয়ে গৃহহারা হয়ে চলেছে। পৈত্রিক ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকেই আজ নিঃস্ব।
আরও পড়ুন: যাদুকাটা নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে সুনামগঞ্জের ২ গ্রাম
ইতোমধ্যে ভদ্রা নদীর ভাঙনে বারোআড়িয়া বাজার ও বারোআড়িয়া গ্রামের আশিংক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ওই এলাকার পুলিশ ক্যাম্প, মসজিদ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মন্দির এমন কি পাউবোর অফিস ভাঙনের পথে। ২০০ পরিবার ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী ধানের গোডাউন ও অনেক সরকারি স্থাপনাও চরম হুমকির মুখে।
এদিকে, কাজিবাছা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বিগত ৫-৬ বছর ধরে শত শত পরিবার গৃহহারা হয়েছে। মাঝখানে জিও টেক্সটাইলের মাধ্যমে খানিকটা ব্লক বসিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলেও বর্তমানে ওই স্থানের ব্লকগুলো সরে গিয়ে উপজেলা বাজার সদরের বেড়িবাঁধ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় সম্প্রতি বড় ধরনের একটি ভাঙন দেখা দেয়ায় বাজার সদর ও তার আশপাশ এলাকার ১০-১৫ গ্রামের মানুষ ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে।
চলমান অমাবস্যার গোন থাকায় বর্তমানে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মাঝে এ আতঙ্ক বিরাজ করছে। আগামী পূর্ণিমার গোনে কখন না জানি আঘাত আসে।
আরও পড়ুন: বালু উত্তোলন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে দিশেহারা এলাকাবাসী
একই অবস্থা পানখালী ফেরীঘাট, বরণপাড়া মোড়ে। উপজেলার ৩০নং পোল্ডারের বরইতলা এলাকার প্রায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যেই ওই স্থানের খুলনা-চালনা মহাসড়কের তলদেশের দুই তৃতীয়াংশ মাটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যে কোন মুহূর্তে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে কিসমত ফুলতলা, দেবীতলা, বাদামতলা, ফুলতলা, হেতালবুনিয়া, বসুরাবাদসহ ৯টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে কাজিবাছা নদীর উপকূলবর্তী বেড়িবাঁধসমূহ চরম হুমকির ভেতরে রয়েছে। এতে দুই উপজেলা দাকোপ ও বটিয়াঘাটার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হয়ে পড়বে বলে এলাকাবাসীর অভিমত।
দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যাহতভাবে এ নদী ভাঙন মানুষকে সর্বস্বান্ত এবং প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য করলেও পাউবোর পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। সে কারণে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের মনে ক্ষোভের দানা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি বিলীন
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম খাঁন বলেন, ‘এভাবে যদি ভাঙন অব্যাহত থাকে তবে বটিয়াঘাটা উপজেলা অনেক ছোট হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলাপ আলোচনা হয়েছে, অচিরেই এ ভাঙনকবলিত এলাকার সমস্যার সমাধান করা হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে নদীর যে ভাঙন দেখা দিয়েছে তা অচিরেই বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সদর রক্ষা বাঁধ ও ভাঙনকবলিত স্থান রক্ষার জন্য স্কিম পাঠানো হয়েছে। স্কিম পাস হলে কাজে হাত দেয়া হবে।’