তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এখানে সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এই অবস্থাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। এ বছর তাপমাত্রা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। গত বছর আজকের দিনে পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ক্রমান্বয়ে এখানে তাপমাত্রা কমছে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার ও বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় যথাক্রমে ৯ দশমিক ২ ও ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ঘনকুয়াশা কমে গেলে হিমেল বাতাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
অন্যান্য দুর্যোগ না থাকলেও শীতকাল এ এলাকার মানুষের প্রধানতম একটি দুর্যোগ। শুধু মানুষ নয়, তীব্র শীতের কারণে এখানকারও পশুপাখিরাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রকৃতি যেমন বিভিন্ন সময় রূপ বদলায় এখানে শীতেও এমনটি হয়ে থাকে। প্রথমদিকে এখানে শীতের স্বাভাবিক রূপ ছিল। রাতের বেলা হালকা শীত অনুভূত হতো। কিন্তু বর্তমানে তা ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৃদু মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। রাতের বেলা ঝড়ছে কুয়াশা বৃষ্টি। হিমালয়ের কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস শীতের রুক্ষতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। বিশেষ করে অসহায় দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে।
শীত এলে এখানকার মানুষ সবদিক থেকেই চরম দুর্ভোগে পড়ে। শীতবস্ত্রের অভাবে সাধারণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে। এ সময়টাতে গ্রামের কমবেশি প্রতিটি বাড়িতেই মানুষকে আগুন পোহাতে হয়। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেন না। কাজকর্ম করতে পারছেন না। একদিকে মানুষ তীব্র শীতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে অন্যদিকে কাজ না থাকায় মানুষের আর্থিক সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশায় শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় শহরের গরম কাপড় বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় বেড়েছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় অনেকেরই সেগুলো ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
অনেকে আবার শীতবস্ত্রের আশায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। পঞ্চগড় জেলায় প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন।
জানা যায়, দুই দফায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বিজিবিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সাধ্যমত শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। কিন্তু তা এ জেলার বিশাল শীতার্ত দরিদ্র মানুষের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া অনেক এলাকাতেই দরিদ্র শীতার্তদের মাঝে এখনো শীতবস্ত্র পৌঁছেনি।
এদিকে এসময়টাতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধরা ভর্তি হয়ে থাকেন। কিন্তু এবার একটু ব্যতিক্রম। হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিলেও ভর্তি হচ্ছেন না। যথাসময়ে সবধরণের টিকা গ্রহণ ও রোগবালাই সম্পর্কে সচেতন হওয়ায় রোগী ভর্তির সংখ্যা কম বলে মনে করছেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মনোয়ারুল ইসলাম।
এসময়টাতে শিশু ও বৃদ্ধদের ঘর থেকে বাইরে বের না করা, ঠাণ্ডা বা বাসি খাবার না খাওয়ানো এবং উষ্ণ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ঘনকুয়াশা গম ও সরিষাসহ কিছু ফল ও ফসলের জন্য আশীর্বাদ হলেও অব্যাহত ঘনকুয়াশায় আলু, বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য কৃষকরা ইতোমধ্যে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন।
বোদা উপজেলা কৃষি কমকর্তা আল মামুনর রশিদ জানান, এবার এখন পর্যন্ত একটানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশা নেই। সকাল বা দুপুরের পর সূর্য উঠছে। এ কারণে এবার ফল ও ফসলের ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই।