পাঁচ বছর আগে এক ভয়াবহ বন্যার সময় সেতুটি ভেঙে পড়েছিল। এরপর কিছুদিন নৌকা ও ভেলায় যোগাযোগ সচল করলেও পরবর্তীতে স্থানীয়রা নিজেদের খরচে সেতুর উপর কাঠ ও বাঁশ দিয়ে একটি সাঁকো তৈরি করেন।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ি ধড়াপার গ্রামের পাশ দিয়ে সতি নদী বয়ে গেছে। কাকিনা- আমিনগঞ্জ সড়কের সাথে গ্রামগুলিকে সংযুক্ত করতে এই নদীর উপর একটি সেতু নির্মিত হয়েছিল।
বাঁশ সেতুটি প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক লোক এবং যানবাহন চলাচলের কারণে ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে স্থানীয়রা সমস্যায় পড়েন।
এখানে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। যে কারণে সেতুটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বাঁশের সেতুর উপর দিয়ে যখন যাত্রী বা রোগীদের নামিয়ে দিয়ে রিকশা পাড় করে নেন চালক। যাত্রীদের পাশাপাশি রোগীদেরও নামতে হয়। অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিস গাড়িগুলি ক্ষতিগ্রস্থ সেতুটি ব্যবহার করতে পারে না। ফলে ওই গ্রামগুলোতে বসবাসকারীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছে।
পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়ের জন্য ঐতিহ্যবাহী কাকিনা হাট এই অঞ্চলের বৃহত্তম হাট। সেই হাটে যেতে তিস্তার চর এলাকার কাকিনা মহিষামুড়ি, হাজিরহাট, চর বৈরাতি, আউলিয়াহাট, কাঞ্চনশর, বাগেরহাট, কানারহাট ও বিনবিনিয়ার চরসহ প্রায় ২০টি গ্রামে বসবাসকারী মানুষকে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে এসব অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও ব্যবসা।
এসব এলাকার ছেলে-মেয়েদের ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু পাড়ি দিয়ে কাকিনা-মহিমারঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, কাকিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাকিনা শিশু নিকেতন, কাকিনা মাদরাসা, কাকিনা উত্তর বাংলা ডিগ্রি কলেজ পড়তে হচ্ছে।
এছাড়া মহিষামুড়ি সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়, কাঞ্চনশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমিনগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কানারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীকে এই পথেই কর্মস্থলে যেতে হয়।
মহিষামুড়ি ধারাপাড় এলাকার আজহার আলী ও মমিন উদ্দিন ইউএনবিকে জানান, এসব এলাকার সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এ সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও সংস্কার বা নতুন করে সেতু নির্মাণে নেই কোনো সরকারি উদ্যোগ।
তারা এই সমস্যার সমাধানে জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
‘গত চার বছর ধরে, আমরাই বাঁশের সেতুটি নির্মাণের জন্য অর্থ, বাঁশ এবং কাঠ সংগ্রহ করে এই সেতু মেরামত করছি। সরকারি আমলা ও জনপ্রতিনিধিদের একাধিকবার বলেও বাঁশ-কাঠের টাকাও পাইনি,’ বলেন আজহার আলী।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল হাসান বলেন, জনবহুল এ সড়কের সেতু ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয়রা সাঁকো তৈরি করে যোগাযোগ সচল রেখেছেন।
‘গতবছর সাঁকোর একটা অংশ মেরামত করে দিতে গিয়েছিলাম এবং এলজিইডি'র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোনে অবগত করেছি। তারা নতুন সেতু নির্মাণে প্রকল্প দেয়ার কথা দিলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি,’ যোগ করেন তিনি।
তবে দ্রুত সেতুটি নির্মাণে এলজিইডি ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়কে জানাবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।