জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতিতেও আমরা এমন হতাশাজনক অবস্থা প্রত্যক্ষ করিনি।’
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মূসক আদায়ের হার ছিল গত অর্থ বছরের (২০১৮-১৯) এ সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। কিন্তু এপ্রিলে এসে তা গত অর্থবছরের তুলনায় বর্তমানে ২০ শতাংশ কম হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিপরীতে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৬৭ হাজার ৭৬৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। আগের বছরে এ সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮৭ হাজার ১৭৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামগ্রিক রাজস্ব আহরণে তা প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ পরিস্থিতি আর কতদিন অব্যাহত থাকবে এ সম্পর্কে এখনও কোনো সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে রাজস্ব আদায়ের অবস্থা আরও খারাপ হবে।’
এনবিআরের এ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার পর মূসকসহ রাজস্ব আদায়কে আবারও সঠিক পথে ফেলতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। ‘সব কিছু থেমে রয়েছে; অনেক ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থায়ী বন্ধের মুখোমুখি। সুতরাং, আমাদের করের জাল স্পষ্টভাবে সঙ্কুচিত হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, সরকার আগামী দিনগুলোতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর টিকা বা ওষুধ এখনও তৈরি হয়নি, তাই বলা যেতে পারে যে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এদিকে, বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মাথায় রেখে সংশোধিত রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৌশল নির্ধারণে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি) জামাল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলা হয়, এ পরিস্থিতি এমন নাও থাকতে পারে বা উন্নতি হতে পারে। ‘পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় কৌশল তৈরি করে এগিয়ে যেতে হবে।’
এ ক্ষেত্রে বড় ব্ড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, মূসকের লক্ষ্য অর্জনে বেশি রাজস্ব আদায় হয় এমন খাত যেমন সুপার শপ, মোবাইল ব্যাংকিং, বিকাশ, সিগারেট, ইন্টারনেট, ওষুধ- এসব খাতের ওপর নির্ভর করতে হবে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ নিবিড় করতে হবে। এ ছাড়া উৎস কর ও বকেয়া রাজস্ব আদায়েও বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।