বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক জানান, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে মে ও জুন মাসে সম্ভাব্য লোকসান হবে আরও এক হাজার কোটি টাকার বেশি।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিমান চলাচল স্থগিত থাকায় মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লোকসান হয়েছে ৯৩৯ কোটি টাকা, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ২৫০ কোটি টাকা, নভোএয়ারের ৩২ কোটি টাকা এবং রিজেন্ট এয়ারের ১৪০ কোটি টাকা।
‘পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে রাষ্ট্র পরিচালিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্ষতি হবে ৭৮০ কোটি টাকা। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের লোকসান হবে যথাক্রমে ১২৫ কোটি, ৩৬ কোটি এবং ৬০ কোটি টাকা’, যোগ করেন তিনি।
কোনো ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মহিবুল বলেন, ‘বিদেশে বিমান সংস্থাগুলোর কয়েক হাজার কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে আমরা সে পথে যেতে চাই না। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্মীদের বেতন ১০-৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।’
বিমান আরও স্থগিতাদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘যদি বিমানের আয় বাড়ে তাহলে কিছু সমস্যা হবে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে আমাদের কোনো লাভের দরকার নেই। আমরা কেবল কর্মীদের বেতন প্রদানের পর কার্যক্রম চালু রাখতে চাই। লাভ নিয়ে আমরা পরে চিন্তা করব যখন পরিস্থিতি আরও ভালো হবে, কারণ আমরা লকডাউনের আগে ৪৬০ কোটি টাকা লাভ করেছি’।
‘এই মুহুর্তে, বিমান সংস্থাগুলো চার্টার্ড এবং পণ্যবাহী বিমান থেকে অর্থ উপার্জন করবে এবং প্রয়োজনে যাত্রীবাহী বিমানগুলো পণ্য বহনের জন্য ব্যবহৃত হবে’, বলেন তিনি।
বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের বেতন প্রদান করছে কিনা জানতে চাইলে মহিবুল বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা, তবে তাদের সমস্যা হওয়ার কথা’।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মোকব্বির হোসেন বলেন, ‘দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি আবেদন করা হলেও, আমরা এক হাজার কোটি টাকা পেয়েছি এবং এটি পরবর্তী এক বছরের মধ্যে চার শতাংশ সুদে পরিশোধ করা হবে।’
তিনি জানান, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ৬০০ জন কর্মী রয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন দিতে সমস্যায় পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ বোর্ড এর সিদ্ধান্ত অনুসারে বিমান কর্মীদের বেতন ১০-৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইও বলেন, ‘বিমানের কোনো কর্মীকে প্রত্যাহার করার মতো সিদ্ধান্ত নেই। চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করে আমরা বিমানবন্দর গ্রাউন্ড পরিষেবা থেকে অর্থ পাচ্ছি।’
এছাড়া বিজিএমইএ এবং এফবিসিসিআই এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ২৩ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত কার্গো সেবার কোনো অর্থ গ্রহণ করবে না বিমান।
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকারের কাছে আবেদন করার পরও আমরা পার্কিং, সিটিং ও ভাড়ার খরচ নেয়ার এবং ব্যাংক ঋণের কিস্তি প্রদানের বিষয়ে কোনো সমাধান পাইনি।’
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিমান সংস্থাগুলো ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে কারণ বেসামরিক বিমান চলাচল, বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় তাকে বহন করতে হয়।
কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মফিজুর বলেন, ‘আমি এ ধরণের কোনো সংবাদ পাইনি। নভোয়ারে ৮০০ কর্মী রয়েছেন এবং আমরা এখন পর্যন্ত কর্মীদের বেতনও দিয়েছি’।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে ১৪০০ কর্মী রয়েছেন এবং সকল কর্মীই গত এক মাসের বেতন পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক থাকায় কাউকে ছাঁটাই করা হয়নি। আমরা এখন প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা লোকসান গুনছি।’
‘চলমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এ খাতে কী হবে তা বলা মুশকিল। এমনকি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং বিমান চলাচল শুরু হয়, তবুও সমস্যা থাকবে কারণ পর্যটকরা আগামী কয়েক মাস কোনো দেশে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকবে এবং সাধারণ মানুষও কম ভ্রমণ করবে’, যোগ করেন তিনি।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সূত্রমতে, সংস্থাটিতে ৭০০ কর্মী রয়েছেন এবং লকডাউন ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তিন মাসের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় রুটে বিমান পরিচালনা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
চলমান করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চীন ব্যতীত সকল দেশের সাথে যাত্রীবাহী বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।