শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে (সিআইআইডি) মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের প্রয়োগ জোরদার করার কথা বলা হলে ২০১৫ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে এ জাতীয় ৮২টি মামলা করা হলেও এখন পর্যন্ত সেগুলোর কোনো সমাধানে আসতে পারেনি সংস্থাটি।
মামলাগুলোতে কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য হিসাব নিকাশে গরমিলের কারণে শুরুর পর্যায়েই আদালতে ব্যর্থ হচ্ছে সিআইআইডি- বলে মনে করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
‘মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ’ শীর্ষক সাম্প্রতিক এক বৈঠকে এনবিআর প্রধান এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন বলে এনবিআর সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে।
এ জন্য তিনি মামলা দায়ের ও অভিযোগপত্র দাখিলের আগে এগুলোতে সঠিক তথ্য, পরিসংখ্যান এবং কাগজপত্র সংগ্রহ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, তাদের দায়ের করা ৮০টি মামলার মধ্যে ৫০টির তদন্ত চলছে। তবে এর মধ্যে মাত্র তিনটি মামলায় চার্জশিট জমা দিতে পেরেছে রাজস্ব সংগ্রহ কর্তৃপক্ষ। আরও সাতটি মামলায় অভিযোগ দায়েরের জন্য এনবিআরের কাছে অনুমতি চেয়েছে সিআইআইডি।
দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও সিআইআইডি যৌথভাবে এক মামলার তদন্ত করছে। সূত্রের তথ্যানুযায়ী, এর পাশাপাশি জালিয়াতির বিরুদ্ধে দায়ের করা ২১ মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে মামলার তদন্ত শেষ করে এনবিআরের কাছ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপের অনুমোদনের জন্য ইতিমধ্যে ১০ মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেছে সিআইআইডি। বর্তমানে অর্থপাচারের ১৫টির মতো মামলা তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সিআইআইডি অর্থপাচারের নতুন দুটি মামলার অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছে। সিআইআইডির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ত্রুটিবিহীন তদন্তের জন্য অর্থপাচারের মামলার ক্ষেত্রে কিছু কাঠামোগত সংস্কার হওয়া উচিত।
অর্থপাচারের মামলা পরিচালনা করার জন্য এনবিআরকে নতুন শাখা গঠনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সে শাখায় প্রসিকিউটশনসহ বেশ কয়েকটি বিশেষ সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।’
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মাধ্যমে সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো কয়েকটি সংগঠনকে এ জাতীয় বিষয় তদন্তের সুযোগ দিয়েছে। ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ আইনের অনুমোদন দেয়।
গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) তাদের মার্চ মাসের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভুল-চালানের কারণে ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এক বছরে ৬৩ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা (৭ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) হারিয়েছে।
২০১৮ সালের সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জমা দেয়া অর্থের পরিমাণ ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে ৬০৩ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্কে (সিএইচএফ) দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালে যা ছিল ৬১৭ মিলিয়ন সিএইচএফ।