খুলনা মহানগরীতে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০টি। এছাড়া অনলাইনে শুধু আবেদনের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন সংখ্যা ১৪।
লাইসেন্স পেলেও বছরের পর বছর নবায়ন না করেই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে এমন সংখ্যাও কম নয়। স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ এবং সঠিক তদারকি না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব অননুমোদিত ও লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে।’
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খুলনা শহরে ২৭০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এর মধ্যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়ন রয়েছে ৯৮ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। এছাড়া নবায়ন হয়নি এমন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৫৭। এর মধ্যে ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০২টি ও ক্লিনিক ৫৫টি। এগুলোর মধ্যে ৪ বছর ধরে নবায়ন হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
আরও পড়ুন: যশোরের অভয়নগরে ৩টি ক্লিনিককে ১.৫৫ লাখ টাকা জরিমানা
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, নগরীতে কোনো আবেদন ছাড়াই এমন লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা শিশু হাসপাতাল (ক্লিনিক), খুলনা শিশু হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ডায়াগনস্টিক), খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ডায়াবেটিক সমিতি খুলনা (ডায়াগনস্টিক), সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক-১ (ডায়াগনস্টিক), সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক-২ (ডায়াগনস্টিক), জাপান মেডিকেল সেন্টার (খুলনা শাখা-১) এবং নিউ পথ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র।
এছাড়া নগরীতে শুধু অনলাইনে আবেদন করেই বছরের পর বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছে কিন্তু লাইসেন্স নেই এমন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৪। এর মধ্যে রয়েছে- বয়রা সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বয়ো ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, নূরজাহান ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, কালিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কালিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পাল্প ডেন্টাল সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, মাই মেডিকেল ল্যাব ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, জেনারেল ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড রির্সোস সেন্টার, বেস্ট কেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার-১, বেস্ট কেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার-২, রহিমা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার এবং শাবাব ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার।
আরও পড়ুন: খুলনায় নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা করছে সিভিল সার্জন অফিস
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮২ সালের মেডিক্যাল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। এসব বৈধ-অবৈধ অনেক হাসপাতালে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে।
ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে জড়িত এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্লিনিকের জন্য লাইসেন্স প্রতি বছর নবায়ন করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা এবং ভ্যাট দিতে হয় ৭ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলে নবায়নে খরচ পড়ে ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা।
এছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন করতে খরচ পড়ে ২৫ হাজার টাকা। যার ভ্যাট হয় ৩ হাজার ৭৫০ টাকা। এর বাইরে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশগত ছাড়পত্র, নারকোটিক পারমিট, কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট এবং ফায়ার সার্ভিসের ক্ষেত্রে নবায়নে আলাদা টাকা খরচ করতে হয়। সেই হিসাবে ওই দুইটি নবায়নের জন্য খরচ ধরলে এক বছরে ১৫৭ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মোট সরকার রাজস্ব আয় হবে ৫৭ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টাকা।
খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান বলেন, ‘খুলনা জেলায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়ায় এ পর্যন্ত ৫-৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৪টি
লাইসেন্সবিহীন ও অবৈধ ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরর বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি যাদের লাইসেন্স আছে কিন্তু শর্ত অনুযায়ী পরিচালনা করছেন না তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, খুলনা জেলায় অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কতগুলো আছে সে বিষয়ে খোঁজ নিতে একটি টিম মাঠে কাজ করছে।
খুলনা জেলা প্রশাসকের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘খুলনায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অনুমোদনহীন ল্যাব পরিচালনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন পরিচালনার নগরীতে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও লাইসেন্সের কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, একটি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈধ সনদ, নিয়মিত নবায়ন, নারকোটিক পারমিট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পরিবেশগত ছাড়পত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ক্ষতিকর ও অক্ষতিকর) সংক্রান্ত ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সত্যায়িত কপি সংরক্ষণ করতে হয়।
বিশেষ সেবার ক্ষেত্রে প্রতিটির শয্যা সংখ্যা, সেবা প্রদানকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের নাম-ঠিকানা, ছবি, বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন, বিশেষজ্ঞ সনদ, নিয়োগ ও যোগদান বা সম্মতিপত্রের প্রয়োজন হবে।
এছাড়া, চিকিৎসা সাহায্যকারীদের তালিকা, যন্ত্রপাতির তালিকা, বর্তমানে যেসব অস্ত্রোপচার ও এ সম্পর্কিত যন্ত্রপাতির তালিকা হাসপাতাল প্রধানের সইসহ সংরক্ষণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর