প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যান চলাচলের জন্য নবনির্মিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করার জন্য দুটি সার্ভিস লেন, পাঁচটি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস, দুটি ইন্টারচেঞ্জ, চারটি রেলওয়ে ওভারব্রিজ, চারটি বড় সেতু, ২৫টি ছোট সেতু ও ৫৪টি কালভার্ট থাকা এ এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করা হয়েছে।
দ্রুত গতির এ সুপার মহাসড়ক ঢাকা শহরের সাথে পুরো খুলনা ও বরিশাল এবং ঢাকা বিভাগের কিছু অংশের যোগাযোগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
মুন্সিগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষ সরাসরি এ আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবে। আর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ার পর যাত্রীরা এক্সপ্রেসওয়েটির পুরো সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তখন এক্সপ্রেসওয়ের দুই অংশ- যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার ও পাঁচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার যুক্ত হয়ে যাবে। দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতু ২০২১ সালের জুনের মধ্যে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বর্তমানে দুই লেনের সড়ক দিয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুর পৌঁছাতে ৫-৭ ঘণ্টা সময় লাগে। আর সড়কের বিভিন্ন অংশে ও মাওয়া ফেরিঘাটে লেগে থাকে বিরক্তিকর যানজট। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট আর ধীরে চলা গাড়ির কারণে অযথা দীর্ঘ সময় লাগবে না। সেখানে উভয় পাশে থাকা দুই সার্ভিস লেন দিয়ে চলবে ধীরগতির যানবাহন। ফলে দ্রুতগতির যান চলবে নির্বিঘ্নে।
মহাসড়কে আগামী ২০ বছর পর্যন্ত যানবাহন বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ১১ হাজার ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এ মহাসড়ক এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হয়ে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ঢাকা ও কলকাতাকে যুক্ত করে আন্তর্জাতিক যাতায়াতকে করবে আরও আরামদায়ক।
২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়া এক্সেপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করেছে। ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন মাস আগেই সম্পন্ন হয়ে যাওয়া এ এক্সপ্রেসওয়ে এখন মুজিব বর্ষের আগ মুহূর্তে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রাবাড়ী-মাওয়া অংশ মঙ্গলবার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে কর্মীরা শেষ মুহূর্তের কাজ সেরে নিচ্ছেন। বর্তমানে এ পথটি যান চলাচলের জন্য আংশিক খোলা রয়েছে।
মাওয়ায় সড়কের পাশে থাকা নিরালা রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো যানজট না হওয়ার ফলে মাওয়া থেকে ঢাকা যেতে এখন দুই ঘণ্টার জায়গায় বরং ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগবে। পোস্তগোলা রেলওয়ে ক্রসিং অতিক্রম করতে সময় লাগত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট। এখন এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে তা অতিক্রম করা ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের ব্যাপার।
‘এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় অনেকে আমাদের এলাকায় বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করতে চাচ্ছেন,’ যোগ করে মাসুদ বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে তাদের এলাকা পর্যটন স্পটে রূপ নেবে।
এক্সপ্রেসওয়েটি দেখতে আসা ব্রিটিশ-বাংলাদেশি আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘এটি চমৎকার। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে যুক্তরাজ্যের কোথাও আছি। এ এক্সপ্রেসওয়ের মান ও সৌন্দর্য দেখে আমি গর্বিত।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার বলেন, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সেপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। এটি চার লেনের নয় বরং দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনের মহাসড়ক।
‘এটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন সড়ক। আমি মনে করি এটি ইউরোপের অনেক দৃষ্টিনন্দন সড়ককে ম্লান করে দেবে। চমৎকার এক নকশায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে,’ জানিয়ে তিনি বলেন, এ এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে বৃক্ষরোপনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে।
কাদের আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা এ এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে চলতি মাসে টুঙ্গিপাড়া যাবেন।