চাকরির বাজারে বিক্রি না হয়ে নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরাই বেছে নিচ্ছেন শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা। করোনার প্রায় দুই বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় অবসর সময়কে কাজে লাগিয়েছেন এই উঠতি উদ্যোক্তারা। পর্যাপ্ত সময়, স্বল্প মূলধন, অনলাইন নির্ভর বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করেই তরুণ উদ্যোক্তারা গ্রাহকদের সেবার মাধ্যমে নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
এদের মধ্যে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের একটি অংশ রয়েছে। উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে তারা নিজ নিজ কর্মস্থানে নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
চাঁদপুরের ছেলে মো. রাকিবুজ্জামান পড়াশোনা করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর দেড় মাসের মাথায় করোনায় বন্ধ হয়ে যায় তার নিজ বিদ্যাপীঠ।পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার পর বছরের প্রথম দিন শাবিপ্রবির গেইটে চালু করেন ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট ‘দ্য বাইট ক্যাভ’।
আরও পড়ুন: ভ্যানচালক বাবা ও চা বিক্রেতা মায়ের মেয়ে ফুটবল প্রশিক্ষণে যাচ্ছে পর্তুগাল
শিক্ষার্থী মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, এসএসসি পাস করার পর ১৭ বছর বয়সে মাথায় শুধু ঘুরপাক খেতে থাকে পড়াশোনার পাশাপাশি যেভাবেই হোক স্বনির্ভর হতে হবে। আর তার জন্য চাই পুঁজি। কলেজের পুরো সময়টা চলে গেলো কিছুটা পুঁজি জমাতে। ভার্সিটিতে পা রাখতে না রাখতেই 'করোনা'র মধ্যে পড়লাম। করোনাকালীন যেই সময়টা বাড়িতে ছিলাম, সেই সময়টা কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। রান্না-বান্নার প্রতি আমার সব সময়ই একটা আগ্রহ ছিল এবং বাসায় প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের রান্না করে আম্মুকে টেস্ট করাতাম। এই আগ্রহ থেকেই ভাবলাম ভার্সিটি গেইটে রেস্টুরেন্ট দেয়ার কথা।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমি যেই ক্ষেত্রেই কাজ করতে যাই বা ব্যবসা দাঁড় করাতে যাই না কেন, প্রথমে সেই সেক্টরে আমাকে নিজের প্রবেশ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। বাড়িতে করোনাকালীন সময়ে সন্ধ্যার পরের সময়টা এক বন্ধুর রেস্টুরেন্টে কাটাতাম। প্রায় ছয় মাস সেখানে আমি সময় দিলাম শুধু নিজের অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য। অবশেষে অনেক বাধা বিপত্তির পর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনে আমি ‘দ্য বাইট ক্যাভ’ রেস্টুরেন্টটি চালু করেছি। আমার সঙ্গে আমারই ডিপার্টমেন্টের বন্ধু মো. মহিউল ইসলাম যুক্ত রয়েছে।
মো.রাকিবুজ্জামান বলেন, আমার শুরু থেকে একটাই লক্ষ্য ছিল-স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি বাজেটে কোয়ালিটিসম্পন্ন খাবার সরবরাহ করা। আমার রেস্টুরেন্টের কাস্টমারদের একটা বড় অংশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। খাবারের গুণগত মানের দিক ভালো হওয়ার কারণে খুব অল্প দিনেই ‘দ্য বাইট ক্যাভ’ সবার আস্থা অর্জন করেছে। আমাদের অনলাইন পেইজ দ্য বাইট ক্যাভ ও ফুড পান্ডা অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের রেস্টুরেন্টের সেবা পুরো সিলেট শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আমার স্বপ্ন আছে দ্য বাইট ক্যাভের আরও একটি ব্রাঞ্চ চালু করার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আদিবা মালিহা পড়াশোনার পাশাপাশি সময় দিচ্ছেন মেয়েদের গহনার দিকে।