জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মণিরামপুর উপজেলায় তিন কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ৮৩৯ টাকায় ২৩টি ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। যার মধ্যে মনোহরপুর এক নম্বর ওয়ার্ডে বালিয়ার খালের ওপর ও তিন নম্বর ওয়ার্ডে বাকের খালের ওপর প্রায় ২৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকায় ১৪ ফুট দৈর্ঘ্যের দুটি ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
বালিয়ার খালের ওপরের ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই পশ্চিম পাশের ডানের ইউনওয়াল ফেটে গেছে এবং রেলিংয়ে ধস নেমেছে। বাকের খালের ওপরের ব্রিজটির খাকুন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের পাশে ডানের রেলিংয়ের গোড়ায় ফাটল রয়েছে। ফাটল রেখেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বাকের খালের ব্রিজটি রঙ টেনে ইতোমধ্যে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
ইউএনবির এই প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গেলে এক যুবক পা দিয়ে ব্রিজের রেলিং খুঁচিয়ে দেখান। তার পায়ের খোঁচায় রেলিং খসে পড়তে দেখা গেছে। বালিয়ার খালের ভাঙা অংশের দায়সারা সংস্কার চলছে। ফলে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলে যে কোনো সময় তা ধসে পড়তে পারে। জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় স্থানীয়রা বালিয়ার খালের ব্রিজটি ভেঙে নতুন করে করার দাবি জানিয়েছেন।
বালিয়ার খালপাড়ের বাসিন্দা সুরেশ চন্দ্র বলেন, ৯ মার্চ হঠাৎ রাত ৩টার দিকে অন্ধকারে স্কেভেটর এসে ব্রিজের দুই পাশে মাটি দিচ্ছিল। আমরা টের পেয়ে মাটি ফেলতে নিষেধ করি। পরে সকালে এসে দেখি ব্রিজের একপাশ ফেটে গেছে। আর রেলিং ধসে রড বেরিয়ে পড়েছে।
স্থানীয় দেবাশীষ মণ্ডল বলেন, ‘আমি ব্রিজের ফাটলের ছবি মোবাইলে ধারণ করে ইউএনওকে কল করে জানাতে চেয়েছিলাম। অনেকবার কল দিয়েছি, তিনি রিসিভ করেননি।’
প্রয়োজনের তুলনায় নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করায় ব্রিজটির এই দশা বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বাকের খাল পাড়ের বাসিন্দা শাজাহান বলেন, একদিন রাত ১০টার দিকে দেখি স্কেভেটর এসে মাটি ভরাট করছে। সকালে উঠে দেখি ব্রিজ ফাটা।
স্থানীয় মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন, ব্রিজ দুটির নির্মাণ ঠিকাদার যশোরের সাগর নামের এক ব্যক্তি। প্রথম থেকেই তাকে কাজ ভালো করার জন্য বলেছি। ঢালাই চলার সময় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারদের উপস্থিত রাখতে বলেছি। তিনি তা করেননি। ফলে ব্রিজ ফেটে গেছে। ব্রিজের ফাটা ছবি মোবাইলে তুলে পিআইওকে দেখিয়েছি। ব্রিজ ভেঙে নতুন করে করার কথা।
বাকের খালের ফাটলের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।
বাকের খালের ব্রিজটির কাজ পেয়েছিলেন যশোরের সিথি এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার সমির মিত্র। তিনি কাজ না করে লভ্যাংশ নিয়ে তা নাহার এন্টারপ্রাইজের সাগরকে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে সমির মিত্র কাজ বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মাঝে আমার সন্তান অসুস্থ ছিল। তাকে নিয়ে ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। সেখান থেকে ফিরে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পিআইও সময় দিতে চাননি। তিনিই কাজটি সাগরকে দিতে বলেছিলেন।
ঠিকাদার হাবিবুর রহমান সাগর বলেন, স্কেভেটর মাটি ভরাট করতে গিয়ে ব্রিজ ফেটে গেছে। ফাটা অংশ ঠিক করে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিদ ব্রিজ ভাঙার দায় সাংবাদিকদের ওপর দিয়ে তিনি এক পর্যায়ে বলেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে সঠিকভাবে কাজ বুঝে নেয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।