নজমুল হুদা শাহীন
আমার মেয়ে বেঁচে থাকলে বড় বিজ্ঞানী হতো। আমার মেয়ের মতো আর কারও যেন এমন মর্মান্তিক মৃত্যু না হয়। সম্ভামনাময়ী মেধার যেন অকালে ঝরে যেতে না হয়। ছয় বছর বয়সে সে তার মাকে হারিয়েছে। তখন ওর মায়ের বয়স ছিল ২৯ বছর। প্রায় একই বয়সে মেয়েও মারা গেলো। ১১ জুন তার জন্মদিন। উদযাপনের জন্য আয়োজন শুরু করা হয়েছিল। তা আর করা হলো না।
এই কথাগুলো বলছিলেন এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পূজা সরকারের বাবা অতুল সরকার।
ইউএনবিকে মুঠোফোনে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, পূজা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
তিনি বলেন, এ কারণে অনেক আশা ছিল আমাদের পুরো পরিবারের। সে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাবে। ওই সময় আমাদের কাছে বেড়াতে আসবে। অফিসে ব্যস্ততা, তাই জামাই ষষ্টির দাওয়াতে আসতে পারেনি তারা।
রুটিন মতো গত ৫ জুন অফিসের বাসে করে পূজা সরকার অন্যদের সঙ্গে ঢাকার হাটখোলা রোডের বাসা থেকে সাভারে কর্মস্থল আনবিক শক্তি কমিশনে যাচ্ছিলেন। বাসটি বলিয়ারপুর এলাকায় গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা সেইফ লাইন পরিবহনের একটি দূরপাল্লার বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজন অতিক্রম করে আনবিক শক্তি কমিশনের বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে পূজা সরকার, আরও দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী- এই চারজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাস চালক রাজীব ওইদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাদের বহনকারী বাসটিকে ধাক্কা দেয়া সেইফ লাইন পরিবহনের চালক মারুফ হোসেন মুন্না মারা যান দুইদিন পর ৭ জুন। এছাড়া ৮ জুন রাতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাদের প্রতিষ্ঠানের আরেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারহানা ইসলাম। ফারহানা ও পূজা সরকার দুইজন সহপাঠি ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন।
অতুল সরকার জানান, স্ত্রী আলপনা সরকার দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর মেয়ে পূজাকে মায়ের স্নেহ দিয়ে বড় করেন। তিনি বলেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুলে পড়ত। ভাল রেজাল্ট করেছিল। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে কৃতিত্ব অর্জন করে পূজা। ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে আটমাস শিক্ষকতা করে সে। এরই মধ্যে আনবিক শক্তি কমিশনে চাকরি হয় তার।
জনতা ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) বর্তমানে অবসরকালীন ছুটিতে থাকা (পিআরএল) অতুল সরকার বলেন, আমার মেয়ে বেঁচে থাকলে বড় বিজ্ঞানী হতো। তার অনেক আশা ছিল।
তিনি আরও বলেন, যে যন্ত্র দানব আমার মেয়েকে হত্যা করলো তার কোন ফিটনেস ছিল না। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। বাসটির রুট পারমিট ছিল না। চালক কিভাবে এ গাড়িটি নিয়ে সড়কে বের হলো। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশে কি আইন কানুন নেই। সড়কে আর কত প্রাণ ঝরলে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে ?
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় দেশে কোন প্রতিবাদ হলো না। কেউ তেমন কথা বললেন না। যা মিডিয়াতেই এসেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। কারও সন্তানের যেন এমন মৃত্যু আর না হয়।
আরও পড়ুন: গরমে ঠাকুরগাঁওয়ে কদর বেড়েছে তালশাঁসের