বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন। আর ১৪ জন রয়েছেন অনুমোদিত ছুটিতে। চিকিৎসক সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জেলায় ১৩ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হলেও যোগদান করেছেন মাত্র ৪জন। এতে জেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা।
১২ লক্ষাধিক জনসংখ্যার উপকূলীয় এ জেলার চিকিৎসা সেবার ভঙ্গুরতা ও চিকিৎসক সংকট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বাসিন্দাদের মধ্যে। স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ জবাবদিহিতা না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোরতা অবলম্বন করলে পদায়নকৃত চিকিৎসকরা কর্মস্থলে যোগদান করতে বাধ্য হতো।
প্রায় ২ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপকূলীয় জেলার সর্বস্তরের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক ও জনবল পদায়নের দাবিতে বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন বাসিন্দারা। কিন্তু কোনো প্রতিকার ও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
জেলার ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিভিল সার্জন অফিসে মোট ১৪৭ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৮ জন। এর মধ্যে আবার ১৪ জন অনুমোদিত ছুটিতে থাকায় বর্তমানে কর্মস্থলে আছেন মাত্র ১৪ জন চিকিৎসক। এর উপর আবার রয়েছে অন্যান্য জনবলের সংকট।
বরগুনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর জেলায় ১৩ জন নতুন চিকিৎসককে পদায়ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু, তাদের মধ্যে যোগদান করেছেন মাত্র ৪ জন। আর বাকীরা এখনো যোগদান করেননি। এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি।
জেলার পাথরঘাটা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কাগজে-কলমে কর্মরত মাত্র ৪ জন। তাদের মধ্যে আবার ২ জন আছেন অনুমোদিত ছুটিতে। এছাড়া বাকি দু’জনের মধ্যে একজন এম. এস. রেসিডেন্সি কোর্সে যাবেন। বাকী একজন দিয়ে চলবে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
বামনা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত ৫ জন। কিন্তু একজন অনুমোদিত ছুটিতে এবং আরেকজন যাবেন এমডি কোর্সে। বেতাগী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত আছে ৫ জন। তার মধ্যে একজন অনুমোদিত ছুটিতে, একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্তিতে কর্মরত এবং আরেকজন এমডি কোর্সে যাবেন। আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত ৪ জন। যার মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং আরেক এমডি কোর্সে যাবেন। তালতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২ জন। এছাড়া বরগুনা সদর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৩ জনের বিপরীতে ৭ জন থাকলেও তাদের মধ্য থেকে ৪ জন বরগুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে কর্মরত এবং সিভিল সার্জন অফিসের ২ জন মেডিকেল অফিসারের স্থলে আছেন মাত্র একজন।
গেল বছরের ১৮ ডিসেম্বর বরগুনার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন করার পরও যোগদান না করা চিকিৎসকরা হলেন- ডা. নুর-ই জান্নাতুল ফেরদৌস, ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেন, ডা. পথিক বিশ্বাস, ডা. মো. রাকিবুল হাসান, ডা. মানা শায়ন্তা ঘোষ, ডা. রাফসানা রউফ, ডা. মো. ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. মো. সাইফুর রহমান ও ডা. বুশরা নওরীন।
আরও পড়ুন: বাকৃবি: ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক মাত্র ৮ জন
বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির (টিআইবি) সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, বরগুনায় চিকিৎসক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ চিকিৎসককে পদায়ন করার পরও তারা যোগদান করছেন না। তার দাবি, চিকিৎসকদের যথাযথ জবাবদিহিতার আওতায় আনতে না পারার কারণে এমন সুযোগ নিচ্ছেন তারা।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, সুদীর্ঘ বছর স্বাস্থ্য বিভাগে চেইন অব কমান্ড বলে কিছু নেই। যার কারণে ইচ্ছেমত নিয়োগ অথবা বদলির রেওয়াজ চলমান।
তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরি করে সরকারের নির্দেশনা মানবেন না এটা হতে পারে না। এখান থেকে বেড়িয়ে না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের সুফল আসবে না।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘বরগুনা জেলায় চিকিৎসক সংকট তীব্র। এ সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠতে ১৮ ডিসেম্বর ১৩ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৪জন যোগদান করলেও বাকীরা এখনো যোগদান করেনি। এ বিষয়ে দু’দফায় চিঠির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বদলি আদেশে ৩ দিনের মধ্যে যোগদান করার কথা থাকলেও তারা এ বিষয়ে গুরুত্ব দেননি। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী এটা তারা করতে পারেন না।’