বাবার সাথে প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বের জেরে পঞ্চগড় জেলার এক শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্কুলে ভর্তি হতে না পেরে এবং নতুন বই না পেয়ে হতাশায় কাটছে ২০১৮ সালে পিইসি পাস করা কামেলী আক্তারের।
বাড়ির কাছে বিদ্যালয়ে পড়তে ইচ্ছুক ওই শিক্ষার্থীর ভর্তি এখন অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে ওই শিক্ষার্থী ও তার পরিবার। আগের বছরও ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চাইলে তাকে নানা অজুহাতে বাদ দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবার।
অভিযোগে জানা গেছে, কামেলী আক্তারের বাবা আব্দুল করিম বেন্টু পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বেন্টু ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শালবাহান দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু জাফরের সাথে বেন্টুর দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বেন্টু ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি এখনো আদালতে চলমান রয়েছে।
বেন্টু জানান, ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর শালবাহান দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে ১৫ নভেম্বর ভর্তি ফরম নিতে যান আব্দুল করিম বেন্টু। কিন্তু দ্বন্দ্ব থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু জাফর তাকে ভর্তি ফরম না দিয়ে ফিরিয়ে দেন। বিভিন্ন মাধ্যমে অনুরোধ জানালেও কোনো কাজ হয়নি। এমনকি গত ২৯ নভেম্বর বেন্টু তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয়নি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে আব্দুল করিম বেন্টুর মেয়ে কামেলী মুনিগছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পাস করে।২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর শালবাহান দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় কামেলী। ভর্তি পরীক্ষায় কৌশলে তার নাম অকৃতকার্যদের তালিকায় প্রকাশ করা হয় বলে অভিযোগ করেন কামেলীর পরিবার। পরে কয়েক দফায় তাকে ভর্তি করার জন্য অনুরোধ করলেও ভর্তি নেয়নি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু জাফর। এরপর ভর্তি আদেশের জন্য আদালতে একটি মামলা করেন কামেলীর বাবা আব্দুল করিম বেন্টু। কিন্তু আদালতে মামলার দীর্ঘ সূত্রিতার জন্য তিনি ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর মামলাটি তুলে নিতে বাধ্য হন। তবে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার দায়ের করা অন্য মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে।
কামেলী আক্তার বলে, ‘শালবাহান দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি আমার বাড়ির কাছেই তাই আমি এখানে পড়তে চাই। আমার বড় দুই্ বোনও এখানে পড়েছে। অন্য বিদ্যালয়গুলো ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। আমার বন্ধুরা সবাই নতুন বই হাতে পেয়ে পড়তে শুরু করেছে। আমি ভর্তি ফরমটিও পাইনি। আমাকে ওই বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়া হোক। বাবার সাথে শিক্ষকের দ্বন্দের জন্য আমি কি শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবো।’
আব্দুল করিম বেন্টু বলেন, ‘ঘটনার প্রেক্ষিতে আমি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তার সাথে আমার দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে, তাই বলে আমার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাবে না এটা হয় না। ওই শিক্ষকের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ইতোমধ্যে আমার মেয়ের এক বছর সময় নষ্ট হয়েছে। এর আগের বছর আমার মেয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু ওই শিক্ষক কৌশলে তাকে ফেল করিয়ে দেয়। এবার ভর্তি ফরমটিও দেয়নি। প্রভাব খাটিয়ে জাফর যা ইচ্ছে তাই করছে। মেয়েটি ভর্তি হতে না পেরে বই না পেয়ে কান্নাকাটি করছে।’
শালবাহান দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু জাফর ওই শিক্ষার্থীর বাবার সাথে মামলা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা করা এবং মামলাটি চলমান থাকায় তাকে ভর্তি ফরম দেয়া হয়নি। এছাড়া আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ৮০ জনের বেশি এবং জিপিএ ২ এর নিচে ছাত্রী ভর্তি করাবো না। তাই ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি ফরম দেয়া হয়নি।’
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আকতার বলেন, ‘পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ ২ এর নিচের ফলাফলের শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফরম দেয়া যাবে না এমন কোনো বিধান নেই। বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’