বিপিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সময়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় হাইড্রোকার্বন সংস্থা বিপিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা কমে আসছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে সরকার নির্ধারিত ১৭৮ জন জনবলের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ১৩১ জন। যেখানে নতুন অর্গানোগ্রামে এর সংখ্যা কম করে হলেও এখনকার সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার কথা।
বিপিসির সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ‘জনশক্তির সংকট বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা ও বাস্তবায়নে বড়সড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।’
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ী বন্দরে নতুন এলপিজি টার্মিনাল তৈরির পরিকল্পনা বিপিসির
তিনি বলেন, সরকারের অনুমোদন নিয়ে অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের পদক্ষেপসহ সমস্যা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে বিপিসি।
একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিপিসি এবং পরের বছর দেশে পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি, মজুদ, বিপণন, বিতরণ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম তত্ত্বাবধান, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ এবং পেট্রোলিয়াম তেল লুব্রিকেন্ট ব্যবসায়ের অবকাঠামোগত সুবিধাদি উন্নয়ন/প্রতিষ্ঠার জন্য অবকাঠামোগত সুবিধার উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনে সাতটি বাণিজ্যিক সহায়ক সংস্থার প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
সাতটি সংস্থা হলো- ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, এলপি গ্যাস লিমিটেড, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্ন্ড লিমিটেড এবং স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড।
আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে বাড়ছে তেলের দাম: ক্ষতির মুখে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি
সম্প্রতি সরকার বেশ কয়েকটি নতুন মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে শেষ পর্যন্ত যার নজরদারির দায়িত্ব পড়েছে বিপিসির উপর। এ জাতীয় প্রকল্পের জ্বালানির চাহিদা বাড়তে থাকায় তা মেটাতে বাল্ক এলপিজি (এবং অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য) আমদানি অন্তর্ভুক্ত করায় বিপিসির কার্যক্রমের ক্ষেত্র আরও বেড়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমানে বিপিসি মোট ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। যার প্রধান প্রকল্পগুলো হলো- ইনস্টলেশন অন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন, জেট-এ-১ পাইপলাইন ফ্রম পিতলগঞ্জ (নেয়ার কাঞ্চন ব্রিজ) টু কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপো (কেএডি) ইনক্লুডিং পাম্পিং ফ্যাসিলিটিজ অয়েল পাইপ লাইন ফ্রম চিটাগাং টু ঢাকা, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ ও হুকুম এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন/ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদি উন্নয়ন এবং ইনস্টলেশন অব কাস্টডি ট্রান্সফার ফ্লো মিটার অ্যাট ইআরএল ট্যাংক ফার্ম।
আরও পড়ুন: যেসব কারণে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে বাংলাদেশের
বিপিসির প্রকল্প তালিকায় প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেনসি সার্ভিস ফর ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিপিসি একই সাথে নিজস্ব উদ্দেশ্যে এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য ঢাকার কাওরান বাজারে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান অফিস ভবনসহ যমুনা ভবন নামে পরিচিত ২০ তলা যমুনা অফিস বিল্ডিং নির্মাণ প্রকল্প (২ ধাপে) বাস্তবায়ন করছে এবং চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় তিনটি বেসমেন্ট ফ্লোরসহ ১৯ তলা মেঘনা অফিস ভবন নির্মাণে কাজ করছে বলে সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কথা বিপিসি এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এছাড়াও আরও কিছু প্রকল্প বর্তমানে অনুমোদনের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ইআরএল ইউনিট-২ স্থাপন, চট্টগ্রামে বিপিসি প্রধান অফিস ভবন নির্মাণ, বিপিসির বিপণন সংস্থাগুলোর টার্মিনাল অটোমেশন এবং কক্সবাজারে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে আমদানি ভিত্তিক এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ, উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাজেটে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা
বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়ে গেলে সংস্থাটির পরিচালনা কার্যক্রমের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে এবং প্রযুক্তিগত ও ব্যবস্থাপনা উভয় ক্ষেত্রে জনবলের প্রয়োজন পড়বে।
বিপিসির পরিচালক (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ‘এই প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বুঝতে পেরে আমরা বর্তমানের ১৩১ জন থেকে বাড়িয়ে ৩৮০ জন কর্মচারীর তালিকা করে আমাদের বিদ্যমান অর্গানোগ্রামটি বাড়ানোর চেষ্টা করছি।'
এই ক্ষেত্রে আইন, জনসংযোগ এবং এস্টেটের মতো কিছু নতুন বিভাগ সংস্থাটির বিদ্যমান বিপণন, বিতরণ, অপারেশন, অ্যাকাউন্টস, ফিনান্স, অডিট এবং সাধারণ সেবার সাথে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আগামী বছর ৪৯.৮ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা সরকারের
ভবিষ্যতের কর্মকাণ্ডের সুযোগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আরও জনবলের প্রয়োজনীয়তার যথার্থতা তুলে ধরে সাবেক বিপিসি চেয়ারম্যান মুক্তাদির আলী এসপিএম প্রকল্প, এলপিজি আমদানি, গভীর সমুদ্র বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনা এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি নতুন উত্পাদন ইউনিটের মতো নতুন কার্যক্রমের ক্ষেত্রগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য সংস্থাটির প্রযুক্তিগত কর্মী নিয়োগকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আইন বা জনসংযোগ দপ্তরের কার্যক্রম আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে তবে নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনা নতুন প্রযুক্তিগত জনশক্তি ছাড়া সম্ভব হবে না।