ভরা মৌসুমেও দাম বেশি হওয়া খুলনায় ইলিশ মাছ সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। বিভিন্ন বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা, ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় দাম কমার আশায় আছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা।
খুলনার পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১ জুলাই থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলেও চাহিদার তুলনায় মাছের সরবরাহ কম থাকাতে এখন প্রতিটি পাইকারি ও খুচরা বাজারে ইলিশ দাম বেশি বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই বাজারে যাচ্ছেন কিন্তু ইলিশ না কিনে ফিরছেন।
খুলনার গল্লামারি বাজার, সন্ধ্যা বাজার, নিউমার্কেট বাজার, রুপসা বাজার, নতুন বাজার, বয়রা বাজার, খালিশপুর বাজারসহ সকল বাজারে ইলিশের দাম চড়া।
আরও পড়ুন: তীব্র খরায় বাগেরহাটে আমন উৎপাদন ব্যাহত
খুলনার পাইকারি মাছ বাজারের দেড় কেজি ইলিশ প্রতি মণ (৫৫ হাজার থেকে ৫৭ হাজার) টাকা, এক কেজি ইলিশ প্রতি মণ (৫০ হাজার থেকে ৫২ হাজার) টাকা, ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ (৪৩ হাজার থেকে ৪৪ হাজার) টাকা এবং ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ (৩২ হাজার থেকে ৩৩ হাজার) টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফলে বড় ইলিশ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ভাগ্যে জুটছে না।
খুলনার ৫ নং ঘাটে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের আওতাধীন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং রূপসা মাছ বাজার খুলনায় পাইকারি ইলিশের উল্লেখযোগ্য দুটি ব্যবসা কেন্দ্র।
এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রায় ছয় দশক ধরে পাইকারি মৎস্য বিক্রয় করছেন শেখ সাইদুল ইসলাম। ১৯৫৯ সাল থেকে তার বাবা এই ব্যবসা শুরু করেন এবং বাবার হাত ধরে তিনি এই ব্যবসায় আসেন। তিনি ছাড়াও এই কেন্দ্রে ছয় জন মৎস্য ব্যবসায়ী (মহাজন) রয়েছেন।
আরও পড়ুন: স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
শেখ সাইদুল ইউএনবিকে জানান, দক্ষিণ বাংলার বরিশাল, বরগুনা, ভোলা থেকে এখানে ট্রলারে করে ইলিশ মাছ আসে। যা সকাল ১০টার মধ্যে খুচরা বিক্রেতারা ক্রয় করে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন সড়ক ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় জেলেরাই ট্রাক ও পিকআপে করে ইলিশ নিয়ে যায়। আগে মহাজনরা মাছ বিক্রি করে পাঁচ শতাংশ কমিশন পেত, এখন সেটি তিন শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি জানান, গত বছর তিনি আট কোটি টাকার মাছ বিক্রি করলেও তেমন মুনাফা অর্জন করতে পারেননি।
এর মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে দুই হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এর ফলে আরেক দফা ইলিশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
খুলনা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদীতে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে যা ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
আরও পড়ুন: খুলনায় ‘অপরিকল্পিত’ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, মরে যাচ্ছে শত শত গাছ
খুলনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, এবার ইলিশের দাম বেশি হওয়ার কারণ ডিজেলের (তেল) দাম বৃদ্ধি, আশানুরূপ মাছ না পাওয়া এবং একশ্রেণির ধনী মানুষের নিম্নবিত্তের দিকে না তাকিয়ে ফ্রিজে ইলিশ কিনে ভর্তি করে রাখা।
উল্লেখ, গত ১ নভেম্বর ২০২১ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। ১ জুলাই থেকে মাছ ধরা শুরু হলেও গত বছরের তুলনায় এবারের উৎপাদন কম। আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের শেষ দিন পর্যন্ত মা ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।