মহামারি করোনা ভাইরাসের পর আরেক বড় সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএনসিসি)বাসিন্দারা। মশার উপদ্রবে অতিষ্ট তারা। ডিএনসিসি মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযানের কথা দাবি করলেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না তাদের।
মিরপুর-৬ এলাকায় বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, মশার ব্যাপক উপদ্রব আমাদেরকে হতাশ করেছে। কারণ করোনা মহামারির মধ্যেই এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বন্যার পানির সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মশার সংখ্যা বেড়ে যায়। জমে থাকা বৃষ্টির পানি মশার নিখুঁত প্রজনন ক্ষেত্র।
কিন্তু ডিএনসিসির গৃহীত পদক্ষেপগুলো অপ্রতুল বলে জানা গেছে। ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়ও মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসী রেহাই পাচ্ছেন না।
ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে,পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই তারা নিয়েছে।
মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে না পারার কারণেই মূলত ডিএনসিসির আওতাধীন কয়েকটি এলাকায় মশা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মশারি, কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট এবং মশানাশক স্প্রে করেও এই অবস্থা থেকে প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
দীর্ঘ বর্ষার কারণে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর মশার উপদ্রব আরও বেশি হয়েছে।
নগরবাসী জানায়, নগরীর বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল এমনকি চলন্ত যানবাহনসহ সর্বত্রই মশা।
মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির বরাদ্দ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ডিএনসিসির বাজেট অনুসারে, এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বরাদ্দের মধ্যে কীটনাশক সংগ্রহের জন্য ৪৫ কোটি টাকা, আগাছা পরিষ্কারের জন্য তিন দশমিক ৫০ কোটি টাকা, মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিন কোটি টাকা, মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযানে ডিএনসিসির অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগের জন্য ২৭ কোটি টাকা এবং চিরুনি অভিযানের জন্য চার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য আরও ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান অভিযোগ
দক্ষিণ সিটির মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, মেরাদিয়া, গোড়ান, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকা, ফকিরাপুল, আরামবাগ, পল্টন, মতিঝিল, কমলাপুর, মানিকনগর, বাসাবো, মুগদা, খিলগাঁও, ধোলাইখাল, কুড়িল, মীর হাজীরবাগ,শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, মোহাম্মদপুর,হাজারীবাগে মশার উপদ্রব বেশি।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী আকবর আলী বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা হিসেবে চমৎকার হলেও মশার সমস্যায় অনেকেই সেখানে থাকতে চান না। এখানে থাকতে হলে আপনাকে সন্ধ্যায় মশারির নীচে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বসুন্ধরা এলাকায় মশার উপদ্রব রোধে ডিএনসিসির কোনো অভিযান বা কর্মসূচি আমার চোখে পড়েনি।
ভাটারা এলাকার রুহুল আমিন ইউএনবিকে বলেন, মশার আতঙ্কে আমরা খুবই আতঙ্কিত। মশা যেনো শহর দখল করে নিয়েছে। রাস্তায় স্পে করা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে নগর কর্তৃপক্ষের আর কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না।
আরও পড়ুন: ‘মশার কোন বর্ডার নেই, সচেতনতার বিকল্প নেই’
বাড্ডার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মেহেদী বলেন, এ এলাকায় মশার উপদ্রব একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আমরা মশার কামড় এড়াতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি, তা সাময়িক হলেও, মশার উপদ্রব আবার দেখা যেতে পারে।
শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা ফারুক রহমান বলেন, সিটি করপোরেশনের উচিত সারা বছরই মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান চালানো। মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। বাস্তবতা হলো, সিটি করপোরেশন এই সমস্যা রোধে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।