মোংলা বন্দরের ১০ নম্বর মুরিং বয়ায় বছরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার রাতে নোঙর করে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি ওয়াংডা’। গত ২৩ নভেম্বর মরক্কোর জর্জস লাসফার বন্দর থেকে সার নিয়ে জাহাজটি ছেড়ে আসে মোংলা বন্দরে পণ্য খালাসের উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন: ভারতীয় চালের প্রথম চালান জানুয়ারিতে মোংলা বন্দরে পৌঁছাবে
এ জাহাজের নোঙরের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরে নতুন রেকের্ড গড়ে মোংলা সমুদ্রবন্দর। ‘এমভি ওয়াংডা’ দিয়ে পূর্ণ হয় এক মাসে ১১৭ জাহাজের আগমন। বন্দর সৃষ্টির গত ৭০ বছরের কোনো মাসেই এত বাণিজ্যিক জাহাজ মোংলা বন্দরে আসেনি। পণ্য বোঝাই ১১৭ জাহাজ আগমনের ঘটনা এটাই প্রথম।
এর আগে এক মাসে ১০৬টি পর্যন্ত জাহাজ বন্দরে আগমন করেছিল। এখন ধীরে ধীরে বন্দর উন্নয়নের সাথে জাহাজেরও আগামন বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে মোংলা বন্দরে ৩ নাবিক পর্যবেক্ষণে
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন জানান, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর মোহনায় আউটারবার ড্রেজিংয়ের কারণে পূর্বের নব্যতার সংকট কাটিয়ে বন্দর চ্যানেল এখন পূর্ণাঙ্গরূপে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এখানকার আধুনিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির ফলে বিদেশিরা এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হওয়ায় জাহাজ আগমনের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মোংলা বন্দর সফরে ভারতীয় কোস্টগার্ডের ২ জাহাজ
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ছিল ৪১৬। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৮২, ২০১৬-১৭ মেয়াদে ৬২৪, ২০১৭-১৮ সময়ে ৭৮৪ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সে সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৯১২টিতে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছরই বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ১২০ থেকে ১৫০টি করে বেড়েছে। সেই ধারবাহিকতায় ২০২১ সালে মোংলা বন্দরে আসা জাহাজের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: ৮ বন্ধু মিলে মোংলা বন্দর দেখতে এসে লাশ হয়ে ফিরলেন দুজন
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলায় ডিসেম্বরে আগত বিদেশি জাহাজের মধ্যে ছিল কন্টেইনারবাহী, গাড়ি বহনকারী, কয়লাবাহী, ইউরিয়া সার আনয়নকারী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লিসহ নানা সরঞ্জমাদি, পাওয়ার প্লান্ট ও রেললাইনের মালামালসহ অন্যান্য প্রকল্পের পণ্য বহনকারী, জেনারেল কার্গো, সিমেন্ট ক্লিংকার, বন্দর সংশ্লিষ্ট এলপিজি প্রতিষ্ঠানের জন্য এলপিজি মিক্সার পরিবাহী জলযান, লাইম স্টোন, সিরামিক ‘র’ ম্যাটেরিয়াল্স, স্লাগ বহনকারী জলযান ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: মোংলা বন্দর আইনের খসড়া অনুমোদন, পরিবেশ দূষণে কঠোর শাস্তি
জাহাজ আগমন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির ফলে বন্দরকে ঘিরে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র যা বেকারত্ব দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, এক সময় নাব্যতা সংকটে জাহাজশূন্য থাকা বন্দরটিতে বর্তমানে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে আগমন করছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৫১৯টি বিদেশি জাহাজের আগমনে আশা করা যায় যে এ অর্থবছরেই এক হাজারটির বেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবে মোংলা বন্দর।
আরও পড়ুন: ভারতীয় পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের চুক্তি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
আগের মোংলা বন্দর আর এখনকার বন্দরের মধ্যে পার্থক্য অনেক। এক সময়ের বন্ধ হয়ে যাওয়া মোংলা বন্দর এখন চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। বন্দর ব্যবহারকারীদের সেখানকার সুযোগ-সুবিধা আর মোংলা বন্দরের সুযোগ সুবিধা একই ধারায় চলছে। এছাড়া ৩০ ডিসেম্বর ইনারবার ড্রেজিংয়ের কাজে চায়না কোম্পানির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে, যা চলতি মাসে শুরু হবে। এটি শেষ হলে এ বন্দরকে আর পেছনে তাকাতে হবে না। এটি একটি পরিবেশবান্ধব, আধুনিক ও ডিজিটার বন্দরে পরিণত হবে। এছাড়াও মোংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের উপযুক্ত বিকল্প বন্দরে পরিণত হবে। অর্থনৈতিকভাবে মোংলা হবে ব্যবসায়ীদের জন্য যুগোপযুগী গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এলাকা, বলেন তিনি।