সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়ির দুর্গাপূজা করোনা সংক্রমণের কারণে কর্তৃপক্ষ গেল ৩ বছর উৎসব বন্ধ রাখার পর এবার ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে আগের রূপে ফিরছে।

আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা: মৌলভীবাজারে মণ্ডপের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

মহামারির সময় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে সমুন্নত রাখার জন্য ছোট পরিসরে পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এই বছর আগের মতোই জাঁকজমকপূর্ণ পূজা উদযাপন করতে চলেছে শিকদারবাড়ি।

শিকদারবাড়ী পূজামণ্ডপে মোট ৫০১টি দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।

একাদশ প্রহরে পূজা মণ্ডপে প্রতিমা সাজানোর কাজ চলছে। দর্শনার্থীদের মুগ্ধতে প্রতিমাগুলোতে নানা পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এদিকে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে মহামায়া দেবী দুর্গার সঙ্গী হিসেবে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের দেব-দেবীরা পূজামণ্ডপ জুড়ে বিস্তৃত।

কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া আর রঙ তুলিতে সেখানে দেব-দেবীর প্রতিমা এমনভাবে সাজানো হয়েছে দেখলে মনে হবে জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

শিকদারবাড়ি পূজামণ্ডপে গিয়ে দেখা গেছে, শিকদারবাড়ির দুর্গোৎসব বড় পরিসরে আয়োজনের খবরে দর্শনার্থী আর ভক্তকুলের মধ্যে আনন্দ উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছে পূজামণ্ডপে।

আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে ৪৬৩টি মণ্ডপ নিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি

অনেক জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে পূজামণ্ডপ। পূজামণ্ডপে বেশ কয়েকটি সারিতে আলাদা আলাদাভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা। প্রতিমার প্রতিটা সারি যেন যুক্ত আছে মা দুর্গার মুলমণ্ডপের সঙ্গে।

বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা এমনভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেখলে মনে হবে যেন স্বর্গরাজ্য। বিভিন্ন দেব-দেবী, মা দুর্গার সঙ্গী হয়ে ধরাধামে এসেছেন এক সঙ্গে। মহিষাসুরকে যেভাবে বধ করেছিলেন দেবী দুর্গা, তা দেখানো হয়েছে প্রতিমার মাধ্যমে।

মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তুলে ধরা হয়েছে প্রতিমার মাধ্যমে। কারিগররা (ভাস্কর) তাদের হাতের নিপুণ ছোঁয়া আর রং তুলিতে অপরূপ সাজে প্রতিমা সাজিয়েছেন।

কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া আর রঙ তুলিতে সেখানে দেব-দেবীর প্রতিমা এমনভাবে সাজানো হয়েছে দেখলে মনে হবে পুরো পূজামণ্ডপ যেন দেবালয়।

বিশাল ওই পূজামণ্ডপে ঘুরে দেখা গেছে, ঘোড়ায় চড়ে দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমন ও গমন, বিভিন্ন দেব-দেবীর সৃষ্টির রহস্য, নারায়ণের অনন্ত শয্যা, সমুদ্র মন্থন, সীতা হরণ, শ্রীকৃষের অষ্টসখী, ৬৫ ফুট দৈর্ঘ কুম্ভুকম্ভ দেখা গেছে।

জানা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামে শিকদারবাড়ির পারিবারিক এই পূজামণ্ডপে ২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা সাজিয়ে প্রথম দুর্গোৎসব শুরু হয়। এরপর প্রতি বছর ওই পূজামণ্ডপে বাড়ানো হয়েছে প্রতিমার সংখ্যা।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৮০১টি দেব-দেবীর প্রতিমা সাজিয়ে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল।

শিকদারবাড়ি দুর্গাপূজার আয়োজক পরিবারের সদস্য শিশির শিকদার জানান, করোনার জন্য গত ৩ বছর শুধু ধর্মীয় রীতি রক্ষায় পূজা করলেও দুর্গোৎসব করতে পারেনি। এ বছর আগের মতো দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সানাতন ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে উজ্জীবিত করতে তার স্বর্গীয় বাবা ডা. দুলাল কৃষ্ণ শিকদার বৃহত্তর পরিসরে দুর্গোৎসব শুরু করে গেছেন। বাবার ধারাবাহিকতায় এবারও বড় পরিসরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

শিশির শিকদার জানান, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেচ্ছাসেবক বাহিনী দিয়ে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তল্লাশির মধ্যে দিয়ে দর্শনার্থীদের পূজামণ্ডপে প্রবেশ করতে হবে।

আরও পড়ুন: কলকাতার কারিগরদের রঙ, ছাঁচে দুর্গাপূজার প্রতিমা

বাগেরহাট জেলা পূজা উযদাপন পরিষদের সভাপতি নিলয় কুমার ভদ্র দাবি করেন, পারিবারিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গোৎসব শিকাদারবাড়ি পূজামণ্ডপ। দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ ভক্ত ও দর্শনার্থী দুর্গোৎসবে শিকদারবাড়ি পূজামণ্ডপে আসেন।

প্রতিমার কারিগর (ভাস্কর) বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় জানান, ৫ মাস ধরে ১৫ জনে মিলে শিকদারবাড়ির এই পূজামণ্ডপে বিভিন্ন ৫০১টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। দেশি-বিদেশি নানা রঙ আর অলংকার দিয়ে প্রতিমা সাজানো হয়েছে। প্রতিমায় সোনালি রঙ করা হয়েছে। ৯ ফুট থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার প্রতিমায় রেডিএস কালার ব্যবহার করা হয়েছে।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান জানান, শিকদারবাড়ি দুর্গোৎসবে পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হবে। সাদা পোশাকেও পুলিশ সেখানে মোতায়েন থাকবে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানান, দুর্গাপুজা উৎসবমুখোর এবং শান্তিপূর্ন পরিবেশে করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: এবছর বাগেরহাটে ৬৫২ মণ্ডপে দুর্গাপূজা আয়োজিত

বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিল্পপতি লিটন শিকদার সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে নিজ বাড়িতে দুর্গা উৎসবের আয়োজন করেন।

বাগেরহাট সদর, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা, রামপাল, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলা মিলে জেলার ৯টি উপজেলায় এবছর ৬৫২টি পূজা মণ্ডপে দুর্গা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।