বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপনে হাজার হাজার মানুষ ‘সিটি অব জয়’ খ্যাত কলকাতার রাস্তায় জড়ো হয়েছে। এ যেন উচ্ছ্বসিত আত্মার ভেসে বেড়ানো!

শনিবার থেকে শুরু হওয়া পাঁচদিনের উৎসবটি হিন্দু দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা, ভোজ, আনন্দ, সঙ্গীত, নৃত্য ও মন্দের কাছে ভালোর জয়সূচক  নাটকের মধ্যদিয়ে উদযাপন করা হয়। বাঙালি হিন্দু সম্পদায়ের মানুষ পূজা অর্পণের জন্য জমকালো আলোকসজ্জা ও অলঙ্কৃত কমিউনিটি সেটারগুলোতে দুর্গা ও অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি পরিদর্শন করে।

মহামারির দুই বছর এবং কলকাতার এই উৎসবকে ইউনেস্কোর ‘মানবতার অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ এর অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বড় সমাবেশে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে।

আরও পড়ুন: শনিবার মহা ষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা

কলকাতার প্রাচীনতম কুমার কলোনি কুমারটুলিতে হাজার হাজার মাটির প্রতিমা তৈরি করার মধ্যদিয়ে কারিগররা কয়েক মাস আগে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন।

শিল্পের এই জেলাটি হুগলি নদীর পূর্ব তীরে ঘনবসতিপূর্ণ সরু গলিতে অপরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে আছে। প্রতিমা তৈরির স্টুডিওগুলোতে নেই কোনো শক্ত গাঁথুনি, নেই কোনো পরিপূর্ণ দরজা। কারিগররা সাধারণ সুবিধাসহ এই স্থানকেই স্টুডিও ও থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

তাদের কাজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে কারিগররা ফাইবার গ্লাস মূর্তি বানাতে শুরু করেছে এবং দুর্গার ক্ষুদ্র প্রতিমা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, বাহরাইনসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করছে।

আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা: বাগেরহাটে ৬৪২টি মন্দিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

কাজটি শুরু হয় বাঁশ ও কাঠের একটি অবকাঠামো দিয়ে। এরপর সেখানে কারিগররা ধানের খড় বেঁধে মানব আকার দেয়। এরপর কাদামাটির প্রলেপ লাগিয়ে তারা সম্পর্ণ মানব আকৃতির প্রতিমা গড়েন।

প্রতিমার মুখমণ্ডল ছাঁচ বা হাতের সাহায্যে তৈরি করা হয়। কাদামাটি হুগলি নদী থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং করাতকল থেকে সংগৃহীত ছোট খড়ের টুকরা ও কাঠের গুঁড়া এতে মেশানো হয়। কারিগররা তাদের গ্রাহকদের নির্বাচিত রঙে প্রতিমাগুলো রঙ করেন।

ইউনেস্কো গত ডিসেম্বরে কলকাতার দুর্গাপূজাকে মানবতার অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা: মৌলভীবাজারে মণ্ডপের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

নয়াদিল্লিতে ইউনেস্কোর পরিচালক এরিক ফাল্ট বলেন, এই অন্তর্ভুক্তি ঐতিহ্যবাহী কারিগর, সংগঠক এবং দর্শনার্থীসহ দুর্গাপূজা উদযাপনকারী সম্প্রদায়গুলোকে উৎসাহিত করবে।

১৯৮৫ সালে ডোমিনিক ল্যাপিয়েরের এক উপন্যাস প্রকাশের পরে কলকাতার ডাকনাম ‘দ্য সিটি অব জয়’ করা হয়েছিল। একই নামে ১৯৯২ সালে রোল্যান্ড জফের একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়।

আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা: এমন উৎসব যা বাংলাদেশকে এক করে