জানা যায়, মাছ চাষ করে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখেন উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের গন্ধর্ব্বপুর গ্রামের হাজী এখলাছুর রহমান আখলই, একই গ্রামের জফর আলী, বাবুল মিয়া, আওয়াল মিয়া, মুবাশ্বির আলী, বাগময়না গ্রামের মো. আলমঙ্গীরসহ আরও অনেকেই।
খামারিরা এপ্রিল মাসে পুকুর ও দিঘিতে মাছ চাষের উপযোগী করে রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন ধরণের মাছের পোনা চাষ শুরু করেন। এতে পোনা ক্রয়সহ তাদের লাখ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে খামারের মাছের যাবতীয় পরিচর্যা ঠিক মত চলে আসছিল। এতে প্রতিটি মাছ দ্রুত বেড়ে বলিষ্ঠ হয়ে দেহের গঠন দেখে চাষিরা ছিলেন আনন্দে। প্রতিটি মাছ ৪০টাকায় বিক্রি হওয়া সম্ভব ছিল। সময় মতো পুকুর ও দিঘি থেকে মাছ তুলে বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভের মুখ দেখবেন এমন প্রত্যাশায় শ্রমিক নিয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করে আসছিলেন মৎস্য খামারিরা।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। জুনের শেষের দিকে টানা ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয় এবং পুকুরের চারপাশে জাল ফেলে মাছ রক্ষা করা হয়। আকস্মিক বন্যার পানি কমতে না কমতেই দুই সপ্তাহের ব্যবধানে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে যায় উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। পানির সাথে ভেসে যায় খামারের মাছ। সেই সাথে ভেসে যায় অধিক লাভের স্বপ্ন।
ওই বন্যার পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করলে আবারও তৃতীয় দফা বন্যায় উপজেলা বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে অসংখ্য খামারিদের স্বপ্ন ভেসে যায় পানিতে।
এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত খামারি হাজি এখলাছুর রহমান আখলই ও জফর আলী জানান, বন্যায় তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। লাভের স্থলে মূলধন হারিয়ে তারা এখন সর্বশান্ত। পর পর তিন দফা বন্যায় তাদের দুজনের ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বাগময়না গ্রামের খামারি আলমঙ্গীর জানান, বড় আশা করে লাখ লাখ টাকার পোনা মাছ ছেড়েছিলেন। দফায় দফায় বন্যায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়।
এ ব্যাপারে উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান জানান, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৬০ জন মাছ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ কোটির মত। মৎস্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে আন্তরিক।’
‘ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আর্থিক সহযোগিতা বা ক্ষতিপূরণ বাবদ আর্থিক সহায়তা পাওয়ার একটা আশ্বাস পেয়েছি। আশা করি শিগগরই এটা আমরা পাব। সহায়তা পাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে এটা বিতরণ করতে পারব,’ যোগ করেন মো. আকতারুজ্জামান।