জেলার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২৫টি খটি রয়েছে। যেখানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় সুন্দরবনের কাঠ।
প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব খটি গড়ে উঠেছে। আইনি জটিলতায় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিরুপায় বলে দাবি করেছেন বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়রার জোড়শিং এলাকায় ১৭টি অবৈধ শুঁটকির ডিপো গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে দাকোপের কালাবগি এবং সুতারখালী এলাকায় আটটি খটি রয়েছে। দাকোপের খটিগুলো এখন বন্ধ। চালু থাকা এসব খটিতে চিংড়ি এবং সাদা মাছ শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয়। সারা বছর ধরে চলে এ কাজ।
বর্তমানে সুন্দরবনে মৎস আহরণ নিষিদ্ধ। বন বিভাগের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরার ওপর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরপরও এসব খটি মালিকরা রাতের আঁধারে চড়া দাদন দিয়ে জেলেদের দিয়ে মৎস্য আহরণ করাচ্ছে। এসব খটিতে শুঁটকির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পোড়ানো হচ্ছে শত শত মণ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ। প্রশাসন দেখেও নীরব রয়েছে। আর এ কাজের নেপথ্যে রয়েছে এলাকার কিছু সংখ্যক অসাধু লোক।
এসব খটি সচল হয় রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে। রাত ১০টার পর থেকে চলে মাছ শুকানোর প্রক্রিয়া। ঘরের মধ্যে উপরে মাচা করে নিয়ে কাঠ জ্বালানো হয়। আগুনের তাপে চলে শুটকি প্রক্রিয়া।
স্থানীয় জেলেদের দাবি, বিষ দেয়া মাছ পাইকারি আড়তে বিক্রি হয় না। খটি ডিপো মালিকরা তা কিনে নিয়ে শুঁটকি করে। এলাকার সচেতন মহল সুন্দরবন সংলগ্ন এই এলাকার শুঁটকি ডিপো বন্ধ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে আছাদুলের তিনটি, আবুল হোসেনের দুটি, ফারুক হোসেনের দুটি, আইয়ুব হোসেনের দুটি (খটি) ডিপো রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, জোড়শিং বাজার ও তার আশপাশ পাউবোর বেড়িবাঁধের পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১৭টি মাছ শুকানো শুঁটকি ডিপো। এই ডিপোগুলোতে অবাধে মাছ শুকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ। কৌশলে ডিপো মালিকদের নিজস্ব শ্রমিক দিয়ে সুন্দরবন থেকে রাতের আঁধারে কাঠ কেটে নিয়ে এসে ওই সকল ডিপোতে খুবই গোপনীয়তার সাথে রাখে। ব্যবসায়ীরা লোক দেখানোর মত কিছু সংখ্যক দেশি কাঠ সংগ্রহ করে তা না পুড়িয়ে রাতের আঁধারে সুন্দরবনের কাঠ পুড়িয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে বন বিভাগ অভিযান পরিচালনা করলেও তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে ডিপো মালিক আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষ দিয়ে মারা কোনো মাছ শুটকি করা হয় না। আমরা শিগগরই এসব ডিপোতে শুঁটকির প্রসেস বন্ধ রাখব।’
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, সম্প্রতি সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার একমাত্র কারণ রাতের আঁধারে বিষ দিয়ে ধরা মাছের ঐ সকল শুঁটকি ডিপোতে চাহিদা বেশি।
কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাহারাম বলেন, ‘বন বিভাগ সব সময় শুঁটকি ডিপোর বিপক্ষে। আইনি জটিলতায় লোকালয়ের শুঁটকি ডিপোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। অবৈধভাবে যাতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরতে না পারে সে জন্য সতর্ক দৃষ্টিসহ নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
সম্প্রতি বিষ দিয়ে মাছ ধরার অপরাধে দুটি মামলায় জাল নৌকাসহ জেলে আটক করে জেল হাজতে পাঠনো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. আবু সালেহ জানান, বিষ দিয়ে ধরা মাছ লোকালয়ে উঠলে তখন আর প্রমাণ করার উপায় থাকে না। একাধিকবার অভিযান চালিয়েও ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শুঁটকি ডিপোতে কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি তার জানা নেই দাবি করে বলেন, ‘তবে তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’