রূপসা উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২০ জন কৃষক প্রায় আড়াই হেক্টর জমিতে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। চাষে সফলতার মুখ দেখছেন কৃষকরা। এতে করে সহজেই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা মিটবে।
১নং আইচগাতী ইউনিয়নের দূর্জ্জনীমহল এলাকার কৃষক ফোয়াদ মোল্লা বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো ১৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। প্রায় ৪ মাস আগে জমিতে সূর্যমুখীর চারা লাগিয়েছি। আর ১৫-২০ দিন পর এই ফসল কাঁটতে পারব। আমার জমিতে ২৫০০ চারা আছে। আশা করছি এই ফসল চাষে আমি অধিক লাভবান হতে পারব।’
আরও পড়ুন: অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে কৃষক
রূপসা উপজেলার দূর্জ্জনীমহল ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমার ব্লকে যে সব কৃষক সূর্যমুখী ফসল চাষ করছে, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদেরকে সকল ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। তাদের ফসলের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। সূর্যমুখী লাভজনক ফসল। তাই কিভাবে ফলন ভালো হয় সে ব্যাপারে কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।’
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান জানান, এ বছর উপজেলায় প্রায় আড়াই হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখীর তেল খুবই ভালো। এই উপজেলার দূর্জ্জনীমহল ও নন্দনপুর এলাকায় সূর্যমুখীর চাষ বেশি হয়ে থাকে। গত বছর ২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছিল। এবার আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এই ফসল চাষে কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদেরকে বিনামূল্য বীজ-সার দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে এ বছর ৫০০ কোটি টাকার পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের আশা
তিনি জানান, প্রতি বিঘায় ৭-৮ মণ ফলন পাওয়া যাবে। সূর্যমুখী চাষে খরচ তেমন একটা বেশি না। ভালো জাতের বীজ কিনলে দামটা একটু বেশি পড়ে। এই ফসল চাষে বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। শুধু জমিতে হালকা সেচের দরকার হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে জমিতে এই ফসল লাগাতে হয়। উপজেলায় প্রায় ২০ জন কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছে। ফলনও ভালো হয়েছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সূর্যমুখী আমাদের একটা নতুন ফসল। এটি একটি লবণ সহিষ্ণু ফসল। তেল জাতীয় যত ফসল আছে তার মধ্যে সূর্যমুখী সবচেয়ে ভালো তেল। ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিডমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত ভোজ্য তেলের জন্য সূর্যমুখীর তেল খুবই উপযুক্ত। বর্তমান বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষি প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন ও প্রদর্শনী প্রকল্পের মাধ্যমে সূর্যমুখী চাষে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর জেলায় টার্গেট ছিল ২৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হবে। তবে হয়নি, কারণ এই ফসল চাষ করতে আমরা যে সব জায়গা নির্ধারণ করে ছিলাম সে সব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে তরমুজ চাষ হয়েছে। যে কারণে ১৯৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।’
কৃষি কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সব ফসলের মতো এই ফসলও দোঁয়াশ মাটিতে ভালো হয়। তবে খুলনায় কর্দম মাটি। তাছাড়া এই মাটিতে ফসল একদম খারাপ হচ্ছে না। খুব সহজে কৃষকেরা যাতে এই ফসল চাষ করতে পারে সেজন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করছি। তবে এই ফসলের একটি সমস্যা হলো, যখন বীজ ভাঙানো হয় তখন ওই তেল কিছু সময়ের ভেতর গন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রসেসিং করলে তেল থেকে গন্ধ বের হয় না।’
আরও পড়ুন: মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখীর হাসি