কোভিড-১৯ মহামারির এ ৬ মাসের মধ্যেই হাতিরঝিল এবং আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় ঝিলের পানি বর্ণহীন হয়ে পড়েছে এবং অনেক দর্শনার্থী পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন। হাতিরঝিলে অপরিকল্পিত বর্জ্য অপসারণও এখন একটি সাধারণ দৃশ্য।
নাঈম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা এবং হাতিরঝিল সংলগ্ন গুদারাঘাট এলাকার এক দোকান মালিক ইউএনবিকে বলেন, হাতিরঝিলের পানির গুণগত মান অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘বর্জ্য অব্যবস্থাপনার জন্য হাতিরঝিলের সৌন্দর্য দিন দিন ম্লান হয়ে যাচ্ছে এবং এটি ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর।’
হাতিরঝিল বর্তমানে রামপুরা, মহানগর প্রকল্প, মধুবাগ, বেগুনবাড়ি, কুনিপাড়া এবং মেরুল বাড্ডা এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনের যাতায়াতের অন্যতম পথ।
২০১৫ সাল থেকে সার্কুলার বাস এবং ২০১৬ সাল থেকে ওয়াটার ট্যাক্সি পরিষেবা যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় মাধ্যম হিসেবে কাজ করে আসছে।
হারুন আহমেদ নামে রামপুরাগামী ওয়াটার ট্যাক্সির এক যাত্রী বলেন, বর্ষাকালে হাতিরঝিলের বিভিন্ন জায়গায় পানির দুর্গন্ধ অসহনীয় হয়ে পড়ে।
হাতিরঝিলে অব্যবস্থাপনা ও দূষণের বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে কাজ করতে পারে।
ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘হাতিরঝিল অঞ্চলকে উন্নত করার জন্য একটি নান্দনিক প্রকল্প হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল, আগে যে স্থানের অবস্থা খারাপ ছিল। কিন্তু হাতিরঝিল প্রকল্পটি নিষ্কাশন কাজে সহায়ক হবে না, এটি কখনও সেভাবে পরিকল্পনাই করা হয়নি।’
হাতিরঝিলে পানির এ দূষণের পেছনে পানির তলদেশের নিষ্কাশন লাইন দিয়ে সেখানে বর্জ্য ফেলাকেই অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘পানির নিচে বেশ কয়েকটি নিষ্কাশন লাইন রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে সরাসরি হাতিরঝিলের পানিতে আবর্জনা ফেলা হয়। যত দিন তা অব্যাহত থাকবে তত দিন পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।’
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের সাম্প্রতিক ‘অপরিকল্পিত’ হাতিরঝিল প্রকল্প নিয়ে মন্তব্যের দিকেও তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার ওপর জোর দেন।
আদিল মোহাম্মদ খান ইউএনবিকে বলেন, ‘মূল পরিকল্পনা যা অনুমোদিত হয়েছিল; সংলগ্ন এলাকাগুলোর কথা বিবেচনা করে তা সঠিকভাবে নকশা করা হয়নি। সব অংশীদারকে এ প্রকল্পে করা ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে সেগুলো সংশোধন করা উচিত।’
তিনি বর্জ্য অপসারণের বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ এবং কর্তৃপক্ষকে অনুপযুক্ত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন।
‘হাতিরঝিলে যেসব নর্দমার আবর্জনা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে সেগুলোর বেশির ভাগই অবৈধ। আপনি যখন কোনো ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করবেন, তখন আপনাকে একটি উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নকশায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে কর্তৃপক্ষের কিছু ক্ষেত্রে অন্যভাবে দেখার ঝোঁক রয়েছে, এ অভ্যাসটি পুরোপুরি বন্ধ হওয়া উচিত,’ বলেন তিনি।
আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘প্রকল্পটি বাঁচাতে সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করা উচিত।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য অংশীদারকে এ সংকটের দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক আ স ম রায়হানুল ফেরদৌস জানান, করোনা মহামারির কারণে হাতিরঝিলের পানি পরিশোধন করার একটি প্রকল্প স্থগিত করতে হয়েছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘পরিশোধন প্রকল্পের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। তবে আমাদের অস্ট্রেলিয়ান এবং চীনা বিশেষজ্ঞরা কোভিড-১৯-এর কারণে চলে গেছেন।’
পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে পানি পরিশোধন প্রক্রিয়া আবার আগের মতো শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি ৩১১ একরের এ প্রকল্প অঞ্চলটি আংশিকভাবে খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে শহরের জনগণের জন্য বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে হাতিরঝিল।
২০০৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ মূলত ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, এর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়।