প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার ফুলের বাণিজ্য হতো এই সাবদী গ্রামকে ঘিরে। ফুল চাষে লাভ দেখে আশপাশের আরও ২২ গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এই চাষের পরিসর।
সম্প্রতি বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের দিঘলদী, সাবদী ও মাধবপাশা এলাকায় গিয়ে ফুল চাষে হতাশার চিত্র পাওয়া গেছে। আগে গম, ধান, সরিষা ও আখ চাষ করতেন ওই এলাকার কৃষকরা। অনেক সময় এই সব ফসল করে খরচই উঠত না।
দিঘলদী গ্রামের সুবোধ চন্দ্র হালদার প্রায় ৩৫ বছর আগে বাড়ির পাশের উঁচু জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন। প্রতিদিন অল্পস্বল্প ফুল এনে বিক্রি করতেন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ফটকে। তিনিই এলাকার বেশ কয়েকজনকে ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। ফুল চাষের মাধ্যমে খেয়ে-পরে ভালো থাকায় অন্যরাও এগিয়ে আসেন এ ব্যবসায়। এরপর থেকে ফুলের চাষ বেড়ে চলে।
আরও পড়ুন: ফুল চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে: কৃষিমন্ত্রী
করোনা ও আম্পানের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান গদখালীর ফুল চাষিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বন্দর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে বন্দর উপজেলার ৩৫ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল। আর ২০১২ সালে ৬০, ২০১৩ সালে ৯৫, ২০১৪ সালে ১২০ এবং ২০১৫ সালে ১৪০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়। সর্বশেষ ২০১৯ ও ২০ সালেও বন্দরে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে এ চাষ হয়েছিল। তবে, এ বছর ফুল চাষ হয়েছে মাত্র ৭০ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের মাধবপাশা, সাবদী, দিঘলদী, নৃশং, মোহনপুর, কলাবাগ, জিওধরা, আদমপুর, নয়ানগর ও মুকফুলদী এলাকায় ফুল চাষ অনেক কমে গেছে। একইভাবে কমে গেছে বন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীবাড়ী, মীরকুন্ডি, বাগবাড়ী, কুশিয়ারা ও তিনগাঁও; মুসাপুরের কুলচরিত্র, মিনারবাড়ী ও চর ইসলামপুর এবং ধামগড় ইউনিয়নের নয়ামাটি ও মনারবাড়ী এলাকার জমিগুলোতেও।
কয়েকজন চাষি জানান, ‘বসন্তবরণ’, ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এই তিনটি দিবসে ফুলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে চাষ করে উপজেলার চাষিরা। এছাড়াও সারা বছরই ফুলের চাহিদা থাকে গ্রামে। তবে, এ বছর আগের মতো ফুল চাষ হয়নি।
আরও পড়ুন: করোনায় স্বপ্নভঙ্গ ফরিদপুরের ফুল চাষিদের
করোনাভাইরাস: শত কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে যশোরের ফুল চাষিরা
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা সুলতানা বলেন, ‘ধান, আলু কিংবা ফল চাষে কৃষকরা নানা সুবিধা পেলেও সরকারের পক্ষ থেকে ফুল চাষিরা তেমন কোনো সুবিধা পায় না। আমার অফিস থেকে তেমন কিছুই করতে পারিনি। করোনা পরবর্তী সময়ে ২৭ জন ফুল চাষিকে ৩৯ লাখ টাকার প্রণোদনার কৃষিঋণ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্ষাকালে জমির পানি নামতে দেরি ও জমিগুলো বালি ভরাট হতে থাকায় এ বছর ফুল চাষ কম হয়েছে।’
তিনি বলেন, অনেক চাষি আবার অন্য ফসলের দিকে আগ্রহ বাড়াচ্ছেন। আর যে জমিতে চাষ হয়েছে, সেই জমিগুলোতেও দেরি করে গাছ রোপন করায় ফুল ফুটতে দেরি হচ্ছে। তাই চাষিরা কিছুটা চিন্তিত। তারপরও আশা করা হচ্ছে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রায় এক থেকে দেড় কোটি টাকার ফুল বেচা-বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা।