বেলুন দিয়ে সাজিয়ে জন্মদিন উদযাপনও চলে হরদম। আঁধার নামলেই শহীদ মিনার যেন ব্যক্তিগত উদযাপনের রঙ্গমঞ্চে পরিণত হয়।
শুধু জন্মদিন উদযাপনই নয়, শহীদ মিনারটিতে উচ্চস্বরে ভিন্ন সংস্কৃতির গান বাজিয়ে, আতশবাজি পুড়িয়ে শিক্ষা সমাপনী দিবস (র্যাগ ডে) উদযাপনের অভিযোগও রয়েছে।
গত ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট একটি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করে। সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া তাদের এই অনুষ্ঠানে তারা শহীদ মিনারকে বেলুন-ফেস্টুনে সাজায়, মূল স্তম্ভে ব্যানারও লাগাতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, সন্ধ্যা থেকেই হিন্দি আর ইংরেজি গান বাজিয়ে শহীদ মিনারের বেদীতে নাচানাচি আর হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন তারা।
তাদের অনুষ্ঠান শেষে দেখা যায়, শহীদ মিনারের মূল বেদীজুড়ে আতশবাজির পোড়া কাগজ, বাদামের খোসা, সিগারেটের ফিল্টার, ঝুলছে বেলুন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়সাল হাসান বলেন, ‘শহীদ মিনার জাতির আবেগের জায়গা। শহীদদের স্মরণ ব্যতীত ব্যক্তিগত উদযাপন, নিজের মতো করে শহীদ মিনারকে সাজানো, বা পার্টি করার কাজে ব্যবহার করে শহীদ মিনারকে নোংরা করে ফেলে রাখা অনুচিত। এতে শহীদদের প্রতি অসম্মান করা হয়।’
শহীদ মিনারের এমন ব্যক্তিগত ব্যবহার প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘বাইরের কেউ নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই শহীদ মিনারকে এভাবে ব্যবহার করছে। শহীদ মিনার এমন একটি স্থাপনা যেটা আমাদের অস্তিত্বের ইতিহাস ও বোধ ধারণ করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা যদি শহীদ মিনারে এসে ভিন্ন সংস্কৃতির গান বাজিয়ে নাচানাচি করে তবে সেখানে শহীদ মিনারের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়। আমাদের জাতীয়তাবোধের যে অভাব সেই অভাবের কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের দ্বারা এসব হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী মো. কামালউদ্দিন বলেন, ‘শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীরা যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শহীদ মিনারে যদি কেউ আমাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ধারণ না করে ও শহীদদের ত্যাগের প্রতি অবমাননামূলক কিংবা অসামাজিক কোনো কাজ করে থাকে তবে অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘গঠনমূলক যেকোনো কাজ যা ভাষা, স্বাধীনতা ও স্বাজাত্যবোধ ধারণ করে সেগুলো করার জন্য আমরা অনুষ্ঠানসূচি দেখে অনুমতি দেই। কিন্তু জন্মদিন বা র্যাগ ডে উদযাপনের জন্য কখনোই অনুমোদন দেয়া হয় না।’