ভুক্তভোগীরা জানায়, হাতে টাকা পয়সা না থাকায় ঘরবাড়ি মেরামত করা, নলকুপ ও লেট্রিন সংস্কার নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা। এই অবস্থায় সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলেও তা ছিল অপ্রতুল। এখনও মানুষ ও গবাদিপশু খাদ্য সংকটে ভুগছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, চলতি বন্যায় ৩ হাজার ৮৯২টি গরু লাম্পি স্কিন রোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়াও বন্যার পূর্বে ২৬ হাজার ৩শ’ গরুকে টিকা দেয়া হয়েছে।
তবে এখনও সাড়ে ৪ শতাধিক চরে অসংখ্য গরু লাম্পি স্কিনসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত আছে বলে জনপ্রতিনিধিসহ ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, চলতি বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৭৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। নদীভাঙন ও পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা আড়াই লাখ। বন্যায় প্রায় ৬৩ হাজার বাড়িঘর পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে শতশত গবাদিপশু। নলকুপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪২ হাজার ২৩৭টি। বন্যার পানিতে ডুবে শিশুসহ ২২ জন মারা গেছেন।
বন্যার পানি বিপদসীমার উপর থেকে কমতে শুরু করার পর থেকে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষদের হাত, পা ও আঙ্গুল ফেঁটে যাচ্ছে। শরীরে নানান জটিল রোগ বাসা বাঁধছে।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ বন্যাকালিন সময়ে ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠনের কথা বললেও দুর্গম চরাঞ্চলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হাজার হাজার চরাঞ্চলবাসী। এদিকে অর্থের অভাবে অনেকেই ভাঙা ঘরেই অবস্থান নিয়েছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপূত্র নদ পরিবেষ্টিত মশালের চরের ইউপি সদস্য সিদ্দিক আলী বলেন, ‘আমার ৯নং ওয়ার্ডে ২৫০টি পরিবার রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে গরুর রোগ দেখা দিয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়াও বাড়ির নারী-পুরুষের হাত ও পায়ের চর্মরোগে এবং শিশুরা সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু বক্কর খান বলেন, ‘আমার বতুয়াতুলি ও ফকিরেরচর গ্রামে ১৯৭টি পরিবারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পরিবারে গরুর রোগ দেখা দিয়েছে। প্রতিটি গরুর চিকিৎসা বাবদ আড়াই হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে। এতে কর্মহীন মানুষ দিশেহারা হয়ে পরেছে।’
এছাড়াও চরগুলোতে চিকিৎসক না থাকায় নৌকাভাড়া করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করতে অনেক ব্যয় হওয়ায় চরের মানুষ হাঁফিয়ে উঠছে বলে জানান তিনি।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মহু-বাদশা বলেন, ‘আমাদের চরাঞ্চলে সরকারি কোনো পশু ডাক্তার আসে না। আমাদের বাড়তি ব্যয়ে নৌকা ভাড়া করে মোল্লারহাট বা যাত্রাপুরে গিয়ে গরুর চিকিৎসা করতে হয়। চরের সম্পদ হল গরু। এই গরু না থাকলে আমরা বাঁচবো কিভাবে?’
দুর্দশার কথা চিন্তা করে সরকার যদি সপ্তাহে একবার করে চরগুলোতে ডাক্তার পাঠানোর ব্যবস্থা করলে তাদের ভালো হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মকবুল হোসেন জানান, লাম্পি স্কিন ডিজিজ মূলত ভাইরাল ডিজিজ। মশামাছি থেকে এটি ছড়িয়ে পরে। এতে গরু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে চিকিৎসায় অবহেলা করলে মারাও যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এখনও যে সমস্ত চর এলাকায় আমাদের লোকজন যেতে পারে নাই। দ্রুত সেখানে ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও জানান, বন্যাকালিন সময়ে গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য সরকার এবার ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ৯ লাখ টাকা উপর বরাদ্দ ও বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও আরও ৫ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ডায়েরিয়া ও নিউমেনিয়ারসহ অন্যান্য রোগের সেভাবে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। তবে আমাদের আশঙ্কা রয়েছে যে বন্যা পরবর্তীতে পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগগুলো বিস্তাল লাভ করতে পারে। এজন্য আমাদের ৮৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।