কোভিড-১৯ পুরো বছর ধরে অনেক তারকাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। সেই সাথে তাদের অনেকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন।
মহামারির কারণে চলচ্চিত্র, কনসার্ট, নাটক ও টেলিভিশন চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মতো বিনোদন এবং বিজ্ঞাপন শিল্প গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহ লাইফ সাপোর্টে
তবে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির সংবাদে প্রতিদিন একটু একটু করে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অনেককে রূঢ় বাস্তবতা থেকে মনযোগ সরিয়ে রাখতে সাহায্যও করেছে বিনোদন শিল্প।
কোভিডের প্রথম বছরে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প
দেশের সিনেমা শিল্পে ‘টিকে থাকা’ বলে যে একটি কথা রয়েছে তা ২০২০ সালের মতো এত জোরালোভাবে ইতিহাসে আগে কখনো অনুভূত হয়নি।
চলচ্চিত্রপ্রেমীদের দেশ হিসেবে সুপরিচিত এ দেশে এক সময় সিনেমা হলের সংখ্যা ১,২০০ থাকলেও তা কমতে কমতে এখন ১৯৪টিতে দাঁড়িয়েছে।
দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের মাল্টিপ্লেক্স স্টার সিনেপ্লেক্স গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে তাদের সফল শাখাটি বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে, পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ।
পর্দা নামলো সিনেম্যাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের
স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল ইউএনবিকে বলেন, ‘যদিও বলেছিলাম যে আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি, কিন্তু চলচ্চিত্রপ্রেমীদের বিশাল সমর্থনের কারণে আমরা ফিরে এসেছি। তবে, পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক না হলে আমাদের হয়তো অল্প সময়েই বন্ধ করে দিতে হবে।’
‘প্রতি বছর আমাদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। লকডাউনের সময়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের উচিত হলো কর্তৃপক্ষকে বিদেশি মুভি চালানোর অনুমতি দেয়া,’ বলেন তিনি।
রাজধানীতে পূর্ণিমা, রাজমনি ও অভিসারের মতো বড় হলগুলো ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বলাকা ও মধুমিতার মতো আরও অনেক হল বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকার বাইরের চিত্র আরও অন্ধকার।
কোভিড-১৯ শুরুর আগে থেকেই দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের নানা সমস্যা ছিল। আর মহামারি এসে যাওয়ার পর দেশব্যাপী জীবন ও জীবিকা স্থবির হয়ে সেই সমস্যা রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে।
প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী জিনাত বরকতুল্লাহ আইসিইউতে
দেশের সিনেমা হলগুলোতে হিন্দি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করতে গত ৩০ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি এবং প্রদর্শক সমিতি।
২০২০ সালে দেশে মুক্তি পেয়েছে ১৬টি সিনেমা। আগের বছর এ সংখ্যাটি ছিল ৩৮।
সদ্য সমাপ্ত বছরের আলোচিত কয়েকটি সিনেমা ছিল শাকিব খানের ‘বীর’ ও ‘নবাব এলএলবি’, সিয়াম আহমেদ ও পরী মনির ‘বিশ্বসুন্দরী’, ভারতীয় অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীর প্রথম বাংলাদেশি ছবি ‘গণ্ডি’ এবং সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘রূপসা নদীর বাঁকে’।
নতুন বছর ২০২১ সালে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বেশ বড় কয়েকটি প্রজেক্ট। যার মধ্যে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক, আরেফিন শুভর ‘মিশন এক্সট্রিম’ আর স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কাহিনি নিয়ে ‘দামাল’।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের শিকার হতে হয়েছে আরেফিন শুভ ও নুসরাত ফারিয়াসহ বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র তারকাকে। মহামারিতে প্রাণ হারিয়েছেন বাংলা সিনেমার সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
সংগীত
২০২০ ছিল অনলাইন কনসার্ট এবং লাইভ মিউজিক সেশনের একটি বছর।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবর্ষকে ঘিরে চলা আয়োজন এবার ভিন্নমাত্রা যোগ করে জয় বাংলা কনসার্ট। সেন্টার অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) প্রতিষ্ঠান ইয়াং বাংলার তত্ত্বাবধায়নে ষষ্ঠবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় জনপ্রিয় এই কনসার্ট।
বাংলাদেশি ৮০ লাখ অভিবাসীর জন্য শুক্রবার ভার্চ্যুয়াল কনসার্ট
স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত স্বাধীনতার গান গেয়ে মঞ্চ মাতায় বে অব বেঙ্গল, শূন্য, আরবোভাইরাস, চিরকুট, আর্টসেল, নেমেসিস, লালন, ক্রিপটিক ফেইট ও সিন।
তবে, এ বছর ‘প্লেব্যাক কিং’ অ্যান্ড্রু কিশোর, বিশিষ্ট সুরকার আলাউদ্দিন আলী, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী সুরকার আজাদ রহমান, সরোদ বাদক ওস্তাদ শাহাদত হোসেন খানসহ বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পীকে হারিয়েছে দেশ।
এদিকে, বেশ কয়েকজন শিল্পী তাদের সৃষ্টির কপিরাইট সুরক্ষার দাবি জানালে এবং প্রয়াত রক কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর সম্মানে শিল্পীদের জন্য প্রথমবারের মতো ডিজিটাল আর্কাইভ বা ডিজিটাল সংরক্ষণাগার ‘এবি কিচেন’ চালু করে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস।
টেলিভিশন
টেলিভিশন নাটক শিল্পের জন্য ২০২০ ছিল একটি আলোকময় বছর কারণ দর্শকদের বিনোদন দেয়ার ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমকায় ছিল ইউটিউব এবং ওভার-দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মগুলো।
২০২০ সালে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন অপূর্ব, আজিজুল হাকিম, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, নাসিরুদ্দিন ইউসুফ, আসাদুজ্জামান নূর, আলী যাকের, ইরেশ যাকের, তানজিন তিশা, আবদুল কাদের, মো. বরকতউল্লাহ, জিনাত বরকতউল্লাহ এবং লিয়াকত আলী লাকিসহ অনেক বিশিষ্ট অভিনেতা এবং টেলিভিশন সুপারস্টার।
এছাড়াও, কোভিড-১৯ এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরাজিত হয়েছেন আলী যাকের এবং আবদুল কাদেরসহ কিংবদন্তি কয়েকজন অভিনেতা।
জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুল কাদের মারা গেছেন
২০২০ সালে বিনোদন জগত সংকটপূর্ণ সময় পার করলেও, নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ব্যাক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।