উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর চৌগাছায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এটি প্রায় দ্বিগুণ। উপজেলার ১১ ইউনিয়নের প্রায় সবগুলোর কৃষক বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষ করছেন এবং অনেক সাফলতাও পাচ্ছেন। তাই মাচায় লাউ চাষকারীর সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলার নারায়ণপুর, স্বরূপদাহ, হাকিমপুর ও পাতিবিলা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ মাঠেই লাউ চাষ করা হয়েছে। বছর দুই আগেও মাঠে এভাবে লাউ চাষ দেখা যায়নি।
আন্দারকোটা মাঠে লাউ খেতে কর্মরত কৃষক জিন্নাত মোল্লা বলেন, ‘মাচায় লাউ চাষ তুলনামূলক ব্যয়বহুল হলেও এ পন্থায় চাষ করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়।’
সাধারণত এ অঞ্চলে বাড়ির আঙিনায় ছোট মাচা অথবা ঘরের চালে লাউ চাষ করা হতো। সেই লাউ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়স্বজনের মাঝে বিতরণ বা বাজারে বিক্রি করা হতো। বলা চলে গৃহিণীরা শখের বশে বাড়ির আঙিনায় লাউ গাছ লাগাতেন। তবে বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা এখন ঘরের আঙিনা থেকে লাউকে নিয়ে গেছেন মাঠে। আর মাঠে তা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে মাচা করে।
কৃষক মিঠুন, মনোরউদ্দিন ও জিন্নাত মোল্লা জানান, লাউ চাষের মাচা করতে বেশ খরচ হয়। তবে, সেচ, সার ও কীটনাশক অন্য ফসলের মতো প্রয়োগ করতে হয় না। ফলে গড় খরচ বেশি না হওয়ায় কৃষকরা লাউ চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
তারা আরও জানান, বর্তমানে চৌগাছার বাজারে প্রতিটি লাউ খুচরা ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে লাউয়ের ব্যাপক চাহিদা, দামও ভালো, সে কারণে কৃষকরা এ বছর বেশ লাভবান হয়েছেন। তবে বছরের প্রায় পুরো সময়জুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে লাউ গাছের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তারপরও গাছে যে পরিমাণ ফলন হয়েছে তাতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা।
চৌগাছার প্রধান কাঁচাবাজারের আড়তদার কবির হোসেন বলেন, ‘লাউ প্রতিটি পরিবারে এখন জনপ্রিয় এক সবজি। বাজারে অন্য সবজির তেমন চাহিদা না থাকলেও লাউয়ের বেশ চাহিদা। প্রতি হাটে খুলনা, বরিশাল, ঝালকাটি ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারিরা আসেন এবং লাউ কিনে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যান।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রউচউদ্দিন বলেন, ‘চৌগাছা অঞ্চলের প্রতি ইঞ্চি মাটি ধান-পাটসহ সব ধরনের সবজি চাষে অত্যান্ত উপযোগী। এ জনপদের কৃষকরা বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষ শুরু করেছেন। লালতীর ও হাজারী- মূলত এ দুই জাতের লাউ চাষ বেশি হচ্ছে। কৃষকরা যাতে আরও বেশি চাষে মনোযোগী হন সে জন্য কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছেন।’