সিলেট, ২৮ মে (ইউএনবি)- বিশ্বনাথ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হলেও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ না দেওয়ায় এর কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটি নির্মাণের পর এর নতুন ভবন হস্তান্তরের প্রায় ৬ মাস কেটে গেলেও লোকবল নিয়োগের অনুমোদন না হওয়ায় ৫০ শয্যার চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।
বরং আগে থেকে ৩১ শয্যার হাসপাতালটিতেই জনবল সংকট রয়েছে। আর এখন ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ায় জনবল সংকটে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
সূত্র আরও জানায়, ৩১ শয্যার হাসপাতালটিতেই ১৫৫টি পদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকসহ ৪১টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, চিকিৎসকের অভাবে তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং আয়া-নার্স ও বিভিন্ন বিভাগের টেকনিশিয়ান না থাকায় সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন। ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও হাসপাতাল থেকে কাঙ্খীত সেবা না পাওয়ার হতাশা প্রকাশ করেন অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিভাগের রোগীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে আসা প্রায় ৫০০ শতাদিক রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। জনবল সঙ্কট থাকায় চিকিৎসা সেবাসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসক সঙ্কট থাকায় অনেক সময় নার্স-আয়ারা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। অনেক সময় চিকিৎসক ও নার্স না থাকার কারণে ওয়ার্ড বয় দিয়ে জরুরি বিভাগের কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ২টিই রয়েছে বিকল। ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে উপজেলার লক্ষাধিক জনগণ বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যার কমপ্লেক্সে প্রথম শ্রেণির ১০ জন কর্মকর্তার মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ (টিএইচও) রয়েছেন ৪ জন ডাক্তার। এর মধ্যে একজন আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা, একজন মেডিকেল কর্মকর্তা ও একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি)।
আর শূন্য রয়েছে মেডিকেল কর্মকর্তা (১জন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), সহকারী ডেন্টাল সার্জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও মেডিকেল কর্মকর্তা হোমিওপ্যাথিক পদের কর্মকর্তা।
এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার মধ্যে নার্সিং সুপারভাইজার (১ জন), সিনিয়র স্টাফ নার্স (মিড ওয়াইফ) ৩ জন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে পরিসংখ্যানবিদ (১ জন), ক্যাশিয়ার (১ জন), স্টোর কিপার (১ জন), অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর (১ জন), স্যাকমো (২ জন), ফার্মাসিস্ট (১ জন), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) একজন, সহকারী নার্স (১ জন), স্বাস্থ্য পরিদর্শক (২ জন), সিএইচসিপি (৬ জন), স্বাস্থ্য সহকারী (৩ জন), টিএলসিএ (১ জন), চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে ওয়ার্ড বয় (২ জন), আয়া (১ জন), মালী (১ জন), নিরাপত্তা প্রহরী (১ জন), বাবুর্চী (২ জন) ও অফিস সহায়ক (৩ জন) পদে দীর্ঘদিন যাবৎ লোকবল শূন্য রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. আব্দুর রহমান জানান, হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ও মেডিকেল কর্মকর্তা এই দুইজন ডাক্তার দিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন হাসপাতালে আসা প্রায় ৫ শতাধিক রোগীকে সেবা দেয়া হচ্ছে। অনেক সময় আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তাকে ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতালে অবস্থান করে রোগী দেখতে হয়। বহির্বিভাগে যখন রোগীদের ভিড়ে হিমশিম খেতে হয়, তখন তিনি নিজেই রোগী দেখেন।
হাসপাতালের এই কর্মকর্তা জানান, ৫০ শয্যা হাসপাতালের ভবন হস্তান্তর হলেও এখনো হাসাপাতালটির প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগের অনুমোদন হয়নি। ফলে এখনো ৩১ শয্যারই কার্যক্রম চলছে।
তার আশা, লোকবল নিয়োগের পর ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হলে হাসপাতালে আসা রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেয়া সম্ভব হবে।