কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে একসময়ের পরিচিত ও পুষ্টিকর খাদ্যশস্য কাউন আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কৃষিজীবী মানুষের খাবারের অংশ হয়ে থাকা এই শস্য এখন আর চরাঞ্চলের মাঠে আগের মতো দেখা যায় না। জেলার প্রত্যন্ত চরের কৃষকরা কাউন চাষ ছেড়ে ঝুঁকছেন বেশি লাভজনক ও উচ্চ ফলনের ফসলের দিকে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে জেলায় কাউনের চাষ নেমে এসেছে মাত্র ৬০ হেক্টর জমিতে। অথচ গত বছরও ৪২০ হেক্টর জমিতে কাউন চাষ হয়েছিল। দুই দশক আগে অন্তত বিশ হাজার হেক্টর জমিতে এ শস্যের চাষ হতো।
একসময় যে চরভূমিতে সোনালি কাউনের ঢেউ উঠত, সেখানে এখন চাষ হচ্ছে ধান, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ফসল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুড়িগ্রামের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বর্তমান ধারায় পরিবর্তন না এলে এক দশকের মধ্যেই চরাঞ্চল থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে কাউন। এটি শুধু ফসলচক্রের পরিবর্তন নয়, বরং একটি গ্রামীণ খাদ্য ঐতিহ্যের অবক্ষয়।’
কাউন বা ফক্সটেল মিলেট শুষ্ক সহনশীল ও কম খরচের একটি শস্য। বন্যা বা দুর্ভিক্ষের সময়গুলোতে চরবাসীর ভরসা ছিল এই কাউন। ধানের চেয়ে অনেক কম পানি ও সার লাগে বলে দরিদ্র কৃষকরা সহজে এটি চাষ করতেন এবং ভাতের বিকল্প খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতেন। তবে সময় বদলেছে। এখনকার কৃষকেরা ভাবেন লাভের কথা।
‘কাউনে লাভ নেই’, বলছিলেন নাগেশ্বরীর চর বামনডাঙ্গার কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৫), ‘গত বছর পাঁচ বিঘায় (চাষ) করেছিলাম, এবার করেছি এক বিঘায়। প্রতি বিঘা থেকে চার থেকে ছয় মণ কাউন পাওয়া যায়। প্রতি মণ বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়; কিন্তু খরচ পড়ে আড়াই হাজার টাকা। হিসাব মেলে না।’