মহামারির ছয় মাস পর এখনও কওমী মাদ্রাসাগুলো ছাড়া সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু সেই একই শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকরা এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্ধিত বন্ধের বিষয় নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ১৬ মার্চ থেকে সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ঘোষণা দেয় সরকার। সর্বশেষ ২৭ আগস্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি চলতি বছরের ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
জোবাইদা আক্তার নামে দক্ষিণ বনশ্রীর এক বাসিন্দা জানান, তার দুই ছেলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছে। তিনি মনে করেন, নির্ধারিত ছুটির মেয়াদ বাড়ানো কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘প্রথমদিকে যখন স্কুলগুলো বন্ধ ছিল, তখন আমার বাচ্চারা কিছুটা নিরাপদ মনে করে আমি খুশি ছিলাম। তারা এখনও অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে বাড়ি থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়।’
শাহীন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি (যার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে রয়েছে) বলেন, যদিও শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ব্যতীত বাড়িতে পড়াশোনা করা যথেষ্ট নয়, তবে পুনরায় স্কুল খোলার চেয়ে এটি নিরাপদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা যারা প্রাপ্তবয়স্ক, তারা বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়ে বাইরে যেতে পারি কিন্তু শিশুরা খুব কমই স্বাস্থবিধির নিয়ম মেনে চলে। তাই কোনোভাবেই এখন স্কুলগুলো আবার চালু করা উচিত নয়।’
এদিকে চলতি বছর যে সকল শিক্ষার্থীর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) অংশ নেয়ার কথা, তাদের অভিভাবকরা আরও বেশি মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন।
যত দ্রুত পরীক্ষা নেয়া যায় ততই ভালো উল্লেখ করে ঢাকা বোর্ডের এক পরীক্ষার্থীর বাবা আজমল হোসাইন ইউএনবিকে বলেন, ‘আমার মেয়ে যে মানসিক চাপ সহ্য করছে তা এখন পুরো পরিবারকে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে।’
তবে অনেকেই মনে করেন যে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি না কমা পর্যন্ত পরীক্ষা নেয়া উচিত নয়।
বরিশালের আরেক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মা শাহিদা আক্তার বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে আমার ছেলে ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত রাখা উচিত।’
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছে যে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ১০ দিন আগে নোটিশ জারি করা হবে।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত রয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এই মাসের শেষের দিকে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।’
তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এখনও নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি বলেও জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই জনসংযোগ কর্মকর্তা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সোমবার বলেছেন, স্কুল ও কলেজ পুনরায় চালু করার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে চিন্তাভাবনা করছে।
তিনি বলেন, কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থা নয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে স্কুল পরিচালনা করার জন্য একটি দিকনির্দেশনা প্রকাশ করেছে।
জনস্বাস্থ্য এবং শিক্ষা সম্পর্কে সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসাবে দিকনির্দেশনা প্রস্তুত করা হয়েছে। স্কুল পুনরায় খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে এটি প্রয়োগ করা হবে।
এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংক এবং সিডিসি (যুক্তরাষ্ট্র) ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে।