ত্রাণ অফিস জানায়, ইতিমধ্যে শীতার্ত মানুষের জন্য ৩০ হাজার কম্বলের চাহিদা জানিয়ে জরুরি তারবার্তা পাঠানো হয়েছে।
কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, তার ইউনিয়নের অন্তত ৫৬ হাজার মানুষ এই শীতে কষ্ট পাচ্ছেন। তাদের শীতবস্ত্র কেনারও সামর্থ নেই। প্রতি বছর শীতে তাদের কষ্টের সীমা থাকে না।
‘গত দুদিন ধরে শীতের তীব্রতার সাথে বেড়েছে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়া। এই এলাকার মানুষ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘর থেকে বের হতে পারছে না, এমনকি কাজে যেতেও পারছে না। দিনভর খড়কুটো জালিয়ে শীত নিবারণ করে। রাতেও একই অবস্থা,’ যোগ করেন তিনি।
শীতে কাহিল হয়ে পড়া চর কাবিলপুরের হাফিজার রহমান বলেন, দিনের বেলায় তো তাও থাকা যায়। কিন্তু রাত হলে ঠান্ডায় আর থাকা যায় না।
চর কুন্দেরপাড়ার বছিরন বেওয়া বলেন, শীতের কারণে তিনি বিছানার নিচে খড় দিয়ে ও ওপরে চটের বস্তা দিয়ে তোষক তৈরি করেছেন। এতে নিচে গরম হলেও একটা কাঁথা আর একটা কম্বলে তার শীত যায় না। সে কারণে এলাকার সালাম চেয়ারম্যানের কাছে কম্বল চেয়েছেন।
কছিম উদ্দিন থাকেন নদীর কাছেই। নতুন চর জাগছে তাতে ঘর তুলে ১১টি পরিবার থাকেন। কারণ তাদের নিজের কোনো জমিজমা নেই। অন্যের জমিতে কাজ করেন। যেদিন কাজ থাকে সেদিন কছিম উদ্দিনের মতো ১১টি দিনমজুর পরিবারের মুখে খাবার জোটে। গত দুদিন ধরে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি তাই কাজে যেতে পারছে না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাড়ির মধ্যে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
কছিম উদ্দিন বলেন, শীত কমলে ঘরের ছাগল বেঁচে শীতের কাপড় কিনব। রাতে ঘুমানোর জন্য যা আছে তাতে চলে যায়। কম্বল, কাঁথা আর খড়ের বিছানায় গরম ভালোই হয়। খুব বেশি কষ্ট হয় না। জরাজরি করে একসাথে থাকেন। তাই রাত কাটে ভালো। কিন্তু এমন শীতে জমিতে কাজ করা কঠিন।
একই অবস্থা চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষজনের। যারা দিনে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা শীতের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির জানান, তার ইউনিয়নের মানুষ শীতে আর বন্যায় কষ্ট পায়। সরকার থেকে এবার শীতার্তের জন্য ৬৩১টি কম্বল পেয়েছেন।
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী জানান, ইতিমধ্যে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য জেলায় ৫১ হাজার ৮শ কম্বল দেয়া হয়েছে। তাতে ইউনিয়ন প্রতি মাত্র ৬৩১ জন মানুষ এই কম্বল পেতে পারেন।
শীতের তীব্রতার মধ্যে মানুষকে রক্ষা করতে জরুরিভাবে ৩০ হাজার কম্বলের চাহিদা জানিয়ে তারবার্তা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।