নিজের শহর খারকিভে বোমা পড়তে শুরু করার পর, আন্নামারিয়া মাসলোভস্কা তার বন্ধু, তার খেলনা ও তার জীবন ইউক্রেনে রেখে নিরাপত্তার আশায় পশ্চিমে তার মায়ের সঙ্গে এক দিনের যাত্রা শুরু করে।
অবশেষে অন্যান্য শত শত ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তুদের সঙ্গে ট্রেনে করে হাঙ্গেরিয়ান সীমান্ত অতিক্রম করার পর ১০ বছর বয়সী আন্নামারিয়া বলে, ভাইবারে পাঠানো বার্তাগুলোর উত্তর না পেয়ে খারকিভে রেখে আসা তার বন্ধুদের নিয়ে সে খুব উদ্বিগ্ন।
সীমান্ত শহর জাহনির ট্রেন স্টেশনের ভেতর থেকে স্পষ্ট ইংরেজিতে আন্নামারিয়া বলে, ‘আমি সত্যিই তাদের মিস করি। কারণ আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। আমি সত্যিই উদ্বিগ্ন, কারণ আমি জানি না তারা কোথায় আছে।’
আন্নামারিয়া, যে শুধু তার মায়ের কাছে বেড়ে উঠেছে, সে দশ লাখেরও বেশি শিশুর মধ্যে একজন, যারা রাশিয়া প্রথম আক্রমণ করার পর থেকে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গেছে, যাকে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেছেন ‘একটি ঐতিহাসিক প্রথম অন্ধকার ।’
এর মানে হল যে শিশুরা ২০ লাখেরও বেশি লোকের প্রায় অর্ধেককে প্রতিনিধিত্ব করে যারা যুদ্ধ থেকে পালিয়ে গেছে। এটি এমন একটি প্রস্থান, যাকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সংকট বলে অভিহিত করেছে।
যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা বেশিরভাগই ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তের দেশগুলোতে প্রবেশ করেছে। যেমন হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া এবং মলদোভা। বেশিরভাগই পোল্যান্ডে চলে গেছে। পোলিশ বর্ডার গার্ড এজেন্সি অনুসারে, পোল্যান্ডে ১৩ লাখ ৩০ হাজার শরণার্থী পাড়ি দিয়েছে।
মোলদোভার প্রধানমন্ত্রী নাটালিয়া গ্যাভ্রিলিয়া রবিবার সিএনএনকে বলেছেন, তার দেশে প্রতি আট শিশুর মধ্যে একজন শরণার্থী।
যেহেতু ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় পুরুষদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই৷ তাই উদ্বাস্তুদের বেশিরভাগই শিশু, নারী, শিশুদের মা এবং শিশুদের দাদি নানীরা, যারা নিরাপত্তার সন্ধানে দেশত্যাগ করেছেন।
এই নীতির উদ্দেশ্য হল ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশকারী রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পুরুষদের প্রয়োজন।
আন্নামারিয়ার নিজ শহর খারকিভ, ১৫ লাখ বাসিন্দা নিয়ে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এই শহরে রুশ বাহিনী ভারি বোমাবর্ষণ করেছে। গত সপ্তাহে শহরের সেন্ট্রাল ফ্রিডম স্কোয়ারে একটি সরকারি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হওয়ার আগে রুশ সীমান্তের কাছে শহরের আবাসিক এলাকায় কয়েকদিন ধরে গোলাবর্ষণ করা হয়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলাকে ‘অকপট, ছদ্মবেশী সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন।
আন্নামারিয়া, যদিও তার বয়স মাত্র ১০, সে এখন উদ্বাস্তু, তবে সে হলিউডের অভিনেত্রী হতে চায় এবং স্পষ্ট ইংরেজি বলতে পেরে সে গর্বিত৷
আন্নামারিয়া বলে, ‘আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন অভিনেত্রী হতে চাই এবং ইংরেজি আমার খুব প্রিয় ভাষা। বিশ্বের মানুষের একটি বড় অংশ এটি জানে এবং অন্য দেশে এটি বলাও খুব সহজ।’
আন্নামারিয়া ও তার মা ভিক্টোরিয়া, হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এরপর তারা কোথায় যাবে তা জানে না। আন্নামারিয়া বলে, সে প্যারিসের ডিজনিল্যান্ড দেখতে চেয়েছিল।
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে সে খারকিভে ফিরে যেতে চায় এবং রাশিয়ার সহিংস হামলায় বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া তার বন্ধুদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করতে চায়।
আন্নামারিয়া বলে, ‘যদি যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়, আমি সত্যিই বাড়ি যেতে চাই। কারণ সেখানে আমার বন্ধুরা আছে, আমার বাড়ির পিছনে সুন্দর পার্ক, সুপারমার্কেট, সেন্টার এবং খেলার মাঠ আছে। খারকিভ, এটা আমার হৃদয়ের টুকরার মত।’
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: গোলাবর্ষণ এবং নাগরিকদের দেশত্যাগ অব্যাহত
রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা বাইডেনের