ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা ছড়ানোর’ অভিযোগে যুক্তরাজ্যের দুই এমপিকে দেশটিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমন এক সময় এই ঘটনা ঘটেছে, যখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নৃশংস গণহত্যায় মেতে উঠেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে অধিকৃত পশ্চিমতীর ভ্রমণ করার কথা ছিল তাদের। স্থানীয় সময় শনিবার (৫ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি।
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির ওই এমপিরা হলেন ইউয়ান ইয়াং ও আবতিসাম মোহামেদ। এ ঘটনায় তারা স্তম্ভিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বার্কশায়ারের এয়ারলি ও উডলির প্রতিনিধিত্ব করছেন ইউয়ান, আর শেফিল্ড সেন্ট্রালের এমপি আবতিসাম।
আরও পড়ুন: গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১৭
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সহযোগীদের নিয়ে লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে রওনা দেন তারা। তবে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি তাদের। বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্সে আরবেলের আদেশে তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় তেল আবিব প্রশাসন।
ইসরায়েলের অভিবাসন মন্ত্রীর বরাতে স্কাই নিউজের খবর বলছে, তাদের ইসরায়েলবিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানো ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ড নথিভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই দুই ব্রিটিশ এমপি। যুক্তরাজ্যের কয়েকটি দাতব্য সংস্থার সহায়তায় ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে ইসরায়েল সফরে গিয়েছিলেন বলে তারা জানান।
এই সফর যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের একটি অংশ ছিল বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে। তবে এই প্রতিনিধি দলকে তেল আবিবের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে ইসরায়েল প্রশাসন।
ইসরায়েল প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য, অকার্যকর ও গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমরা ইসরায়েল প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। যুক্তরাজ্যের এমপিদের সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
অবশ্য ইসরায়েলের নিজেদের সীমানা নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডনোচ।
ইউয়ান ও আবতিসাম গত বছর প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর বেশ কয়েকবার পার্লামেন্টে ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন তারা। একারণেই তাদের এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ফেব্রুয়ারিতে আবতিসামের নেতৃত্বে ইসরায়েলের পণ্য নিষিদ্ধ করতে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের ৬১ সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। এছাড়া, গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
এদিকে, উত্তর গাজায় বসতি নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়ায় ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির ও বেজালেল স্মোট্রিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান করেছিলেন ইউয়ান। এ ছাড়াও গাজায় সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের জীবন নিয়ে ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
শনিবার বিমানবন্দরের ঘটনার পর এক যৌথ বিবৃতিতে ওই দুই এমপি জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলের কার্যকলাপ নিয়ে পার্লামেন্টে সরব ছিলেন তারা। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিধিবিধান মেনে চলার ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন তারা। পার্লামেন্টে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার তাদের রয়েছে। সেই অধিকার বলেই ইসরায়েল ও গাজা সম্পর্কে নিজেদের বক্তব্য রেখেছেন তারা।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০, আহত ১৬২
পার্লামেন্টের কাজের সুবিধার্থে পশ্চিমতীরে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন বলে বিবৃতিতে জানান তারা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। পরদিন থেকেই হামাসশাসিত গাজায় ইতিহাসের বর্বোরোচিত হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামলার এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধলাখের বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়ার বিবৃতিতে ল্যামি বলেছেন, যুক্তরাজ্য গাজার এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়। জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করে এই সংঘাতের শেষ চান তারা।