গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে আরও ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করেছে। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬২ জন।
নিহতদের মধ্যে আজ ভোর থেকে চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন ফিলিস্তিনি। মিডল ইস্ট আই গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ১৮ মার্চ থেকে পুনরায় হামলা শুরু করার পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ জন শিশু নিহত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: গাজায় চিকিৎসাকর্মী হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার ইসরায়েলের
গাজার ১০ লাখেরও বেশি শিশু এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পাচ্ছে না বলেও সতর্ক করেছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ।
গাজায় আগ্রাসনের সময় চলতি বছরের ২৩ মার্চ ১৫ জন জরুরি চিকিৎসা কর্মীকে হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহতে এই হত্যাকাণ্ডটি চালিয়েছে আইডিএফ।
হত্যাকাণ্ডের শিকার রেফাত রাদওয়ানের মোবাইলে ধারন করা ভিডিওটি প্রকাশের পর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে আসে। ত্রাণবাহী একটি দল নিহত চিকিৎসাকর্মীদের লাশগুলো খুঁজে পায়। এসময় তারা রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করেছিল।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসাকর্মী ও ত্রাণকর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে। যা নতুন প্রকাশিত একটি ভিডিওতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত। এটি আন্তর্জাতিক আইনে একটি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
গাজায় ১৫ জন চিকিৎসা ও ত্রাণ কর্মীর হত্যাকাণ্ডকে ‘নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধাপরাধ’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক প্রধান এবং মেডিয়েশন গ্রুপ ইন্টারন্যাশনালের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মার্টিন গ্রিফিথস।
ওই ঘটনায় ৮ জন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, ৬ জন দমকল কর্মী ও একজন জাতিসংঘের কর্মী নিহত হয়েছেন।
রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১৭
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এসময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে বেশিরভাগ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যদিও ইসরায়েলও অসংখ্য মৃতদেহসহ মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়টির দেওয়া হিসাবে বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধার আলাদা হিসাব দেওয়া হয়নি। তথ্যমতে, নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েল প্রায় ২০ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবি করলেও এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
চলমান এই যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংস করেছে। বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার মাত্রা এতো বেশি যে, ভূখন্ডটির জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সূত্র: বিভিন্ন এজেন্সি