দ. আফ্রিকার বিশেষজ্ঞেরা বলেছেন, দেশের করোনা সংক্রমণের বর্তমান হার দেখে বোঝা যাচ্ছে, করোনার পিক সময় আরও আগেই পার হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার দেশটিতে ১৫ হাজার ৪২৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে রেকর্ড ২৭ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
পর্যাপ্ত পরীক্ষার সুযোগ না থাকা, পরীক্ষার ফল পেতে দেরি হওয়া এবং নানা জটিলতার কারণে দৈনিক শনাক্তের পরিমাণের এই অবিশ্বাস্য রকমফের হতে পারে। তবে দেশটির সংক্রমণের ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে, দ্রুত ছড়িয়ে পরা ওমিক্রন সংক্রমণ স্থিমিত হয়ে পড়েছে।
উইটওয়াটারস্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস এনালিটিকস বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষক মার্টা নুনস বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, কিছুদিন আগে ওমিক্রন শনাক্তের অন্যতম হটস্পট গাউটেং প্রদেশ এবং সারা দেশের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়; আমরা ওমিক্রন সংক্রমণের চূড়ান্ত অবস্থা পার হয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, এটা ছোট একটি ঢেউ…এবং সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো এর ফলে করোনায় প্রাণহানি ও হাসপাতালগুলোর দূরাবস্থা অন্যান্য ঢেউয়ের তুলনায় অনেক কম ছিল।
আরও পড়ুন: করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করলো দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা
মার্টা আরও বলেন, এটা ঠিক যে কোনো সময় মহামারি হঠাৎ উর্ধ্বগামী হতে পারে। তেমনি গত নভেম্বর মাসের তুলনায় আমরা হঠাৎ নিম্নগামীতা লক্ষ্য করছি।
নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে দ. আফ্রিকার গাউটাং প্রদেশে সংক্রমণের হার বাড়তে দেখি। ২৫ নভেম্বর দেশটিতে বিজ্ঞানীরা করোনার উচ্চ সংক্রমণশীল ওমিক্রন ধরন শনাক্ত করে। এসময় বিজ্ঞানীরা জানায়, বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়ানো করোনার ডেল্টা ধরনের চেয়েও ওমিক্রন দ্রুত সংক্রামক।
খুব দ্রুতই ওমিক্রনের প্রভাবে পুরো দ. আফিকা কাবু হয়ে পড়ে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশটিতে শনাক্ত হওয়া রোগীর ৯০ শতাংশই নভেম্বরের মাঝামাঝি আক্রান্ত হয়।
এছাড়া সারা বিশ্বেই সেসময় দ্রুত সংক্রমণ বাড়তে দেখা যায়। মার্কিন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, গত সপ্তাহে দেশটিতে শনাক্ত রোগীর ৭৩ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। এর মধ্যে নিউইয়র্কে শনাক্ত রোগীর ৯০ শতাংশের বেশিই ওমিক্রনে আক্রান্ত।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে গত সপ্তাহে ৬০ শতাংশ আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৮৯ শতাংশ দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের কথা জানা গেছে।
আরও পড়ুন: করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট: দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বন্ধ হচ্ছে
ওমিক্রনের প্রাদূর্ভাব মাঝারি ধরনের হলেও, বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছিলেন এত দ্রুত শনাক্ত বাড়তে থাকলে দেশের হাসপাতালগুলো রোগীতে পূর্ণ হয়ে উঠবে। অক্সিজেন ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জামের অভাবে হাসপাতালগুলো আবারও চাপে পড়বে। কিন্তু চলতি মাসের শুরুর থেকেই গাউটাং প্রদেশে শনাক্তের হার কমতে থাকে। গত ১২ ডিসেম্বর দৈনিক শনাক্ত ১৬ হাজার পর্যন্ত পৌঁছানোর পর থেকেই ক্রমান্বয়ে শনাক্তের পরিমাণ কমছে।
প্রিটোরিয়ার স্টিভ বিকো একাডেমিক হাসপাতালের কোভিড-১৯ চিকিৎসক ডা. ফারিদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘হঠাৎ শনাক্তের হার কমে যাওয়াটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।’
তিনি বলেন, দ্রুত শনাক্তের হার বৃ্দ্ধি পাওয়ার পর হঠাৎ শনাক্ত কমে যাওয়ার ফলে আমরা বুঝতে পারছি, আমরা প্রথম ঢেউয়ের শেষভাগে এসে পৌঁছেছি।