পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ সংক্রান্ত চুক্তি বা অ-প্রফ্লফ্রেশন চুক্তি (এনপিটি) রিভিউ’ নিয়ে জাতিসংঘের চার সপ্তাহব্যাপী পর্যালোচনার চূড়ান্ত নথিতে বাধা দেয় রাশিয়া। কেননা এই নথিতে রুশ সেনাদের ইউক্রেন আক্রমণ করার পর ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রের সামরিক দখলের বিষয়ে সমালোচনা করা হয়। যার কারণে বড় ধরনের পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা ছিল।
শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপসারণ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপপরিচালক আইগর ভিশনেভেৎস্কি ৫০ বছরের এনপিটি চুক্তির পর্যালোচনামূলক চূড়ান্ত বৈঠকে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত এই নথির ক্ষেত্রে কোনো ঐকমত্য নেই।’
এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি দেশের কাছে তিনি জোর দাবি করেছিলেন যে, নানা অসংগতিতে জর্জরিত ৩৬ পৃষ্ঠার ওই চূড়ান্ত খসড়া নথিতে যেন সম্মতি না দেয়া হয়।
নথিটিতে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ ও সেসব অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার জন্য ১৯১টি রাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ: ইউক্রেনে রেকর্ড মানবিক সহায়তা সংকটের মুখে জাতিসংঘ
আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত ও সম্মেলনের সভাপতি গুস্তাভো জ্লাউভিনেন বলেন, চূড়ান্ত নথিটিতে বিভিন্ন মতামতের সমন্বয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে এবং এতে অংশ নেয়া দেশগুলো এর মাধ্যমে একটি ‘ইতিবাচক ফলাফল’ প্রত্যাশা করছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব এমন এক মুহূর্তে আছে যেখানে আমাদের পৃথিবী ক্রমবর্ধমান সংঘাতে জর্জরিত এবং সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে অকল্পনীয় পারমাণবিক যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনা।
কিন্তু ভিশনেভেৎস্কির বক্তব্য পেশ করার পর জ্লাউভিনেন সম্মেলনের প্রতিনিধিদের বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি যা দেখছি, তাতে সম্মেলনটি চুক্তি বাস্তবায়নের অবস্থায় নেই।’
এনপিটি চুক্তির পর্যালোচনা সম্মেলন প্রতি পাঁচ বছর পর পর হওয়ার কথা থাকলেও এবার কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এ সভা দেরিতে শুরু হয়েছে। নথির ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দেশগুলোর দ্বিতীয় ব্যর্থ চেষ্টা এটি।
এর আগে ২০১৫ সালের পর্যালোচনা সম্মেলনটিও ব্যর্থ হয়েছিল। গণবিধ্বংসী অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা নিয়ে গুরুতর মতপার্থক্যের কারণে সেসময়ের চুক্তি হয়নি।
সে মতপার্থক্যগুলো এখনও দূর হয়নি, তবে আলোচনা চলমান।
আরও পড়ুন: শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও দ. কোরিয়ার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) সংগৃহীত খসড়া নথি অনুযায়ী একটি পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুতরাং,বলা যায় এ বছর এটি নিয়ে বড় কোনো মতপার্থক্য হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ইস্যুটি সম্মেলনের গতিপথ বদলে দিয়েছে। কেননা এই আলোচনায় রুশ প্রেসিডেন্টের সতর্কবার্তার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেসময়জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়া একটি ‘পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ’ দেশ এবং তাদের কার্যক্রমে যেকোনো হস্তক্ষেপের ফলে ‘এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বিশ্ব যা আগে কখনও দেখেনি।’
যদিও পরবর্তীতে পুতিন তার বক্তব্য থেকে সরে এস বলেন, ‘পারমাণবিক যুদ্ধ জয় করা সম্ভব না এবং এই যুদ্ধ করা উচিত নয়।’
২ আগস্ট সম্মেলনে একজন জ্যৈষ্ঠ রুশ কর্মকর্তা পুতিনের এই বক্তব্যটি পুনরায় ব্যক্ত করেন।
কিন্তু পুতিনের প্রাথমিক হুমকি ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র দখলের পাশাপাশি চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্র দখল নতুন করে বিশ্বব্যাপী আরেকটি পারমাণবিক জরুরি অবস্থার আশঙ্কা সৃষ্টি করে।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে জাতিসংঘের মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসন একটি সর্বসম্মত চূড়ান্ত নথি চাইছিল যা পারমাণবিক চুক্তিকে শক্তিশালী করবে এবং স্বীকার করবে যে রাশিয়ার যুদ্ধ ও তাদের ইউক্রেনে দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড গুরুতরভাবে চুক্তিটির অবমূল্যায়ন করেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া ওই কাউন্সিলের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, চূড়ান্ত নথির কাজে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক নিরাপত্তা জোরদার করার বদলে রাশিয়াকে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্টের খসড়া চূড়ান্ত নথিতে চারটি রেফারেন্স রয়েছে, যেখানে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে একে অপরকে গোলাগুলির জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
এ কথা বলে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছে সামরিক অভিযানের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে।
খসড়াটি ইউক্রেনের পারমাণবিক স্থাপনা, বিশেষ করে জাপোরিঝিয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনজুড়ে সামরিক স্থাপনায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা