রাশিয়া সারা ইউক্রেনের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের এয়ার কমান্ড জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো বেলারুশ থেকে মোতায়েন করা রুশ দূরপাল্লার তু-২২ বোমারু বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং বেলারুশিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যে একটি বৈঠকের পরেই এই বোমা হামলা হয়েছে।
পুতিন সেসময় বেলারুশকে ইস্কান্ডার-এম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সরবরাহ করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন।
শনিবার রাতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, রাশিয়া ও মস্কো সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী এখন সিভিয়েরোডোনেৎস্ক ও এর আশেপাশের গ্রামগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর ‘অ্যাজোট প্লান্টকে প্রতিরোধের একগুঁয়ে প্রচেষ্টা’ ব্যর্থ হয়েছে।
শুক্রবার লুহানস্ক প্রদেশের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেছেন, কয়েক সপ্তাহের বোমাবর্ষণ ও লড়াইয়ের পর ইউক্রেনের সেনারা সিভিয়েরোডোনেৎস্ক থেকে পিছু হটছে।
শনিবার তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, শহরটির নিয়ন্ত্রণ এখন রাশিয়ান এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী সেনাদের হাতে। এসব সেনারা এখন দক্ষিণ থেকে লিসিচানস্ক অবরোধ করার চেষ্টা করছে।
লিসিচানস্ক দখলের মাধ্যমে রুশ বাহিনী এই প্রদেশের সবচেয়ে বড় অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হাতে পাবে। পুরো ডনবাস দখল করার জন্য রাশিয়া কাছে লিসিচানস্ক দখল একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ইতোমধ্যে রাশিয়ান এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ডনবাসের দ্বিতীয় প্রদেশ ডোনেৎস্কের প্রায় অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও পড়ুন: স্পেনের ছিটমহল মেলিলায় প্রবেশ; নিহত বেড়ে ২৩
রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থা বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর একজন মুখপাত্র আন্দ্রেই মারাচকোকে উদ্ধৃত করে বলেছে, রাশিয়ান সেনা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধারা লিসিচানস্কে প্রবেশ করেছে এবং শহরের কেন্দ্রস্থলে লড়াই চলছে।
তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এ দাবির বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
রাশিয়ান বোমাবর্ষণের ফলে সিভিয়েরোডোনেৎস্কের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং এর জনসংখ্যা এক লাখ থেকে কমে ১০ হাজারে এসে ঠেকেছে।
এর আগে ইউক্রেনের অবশিষ্ট সেনারা কয়েকশ’ বেসামরিক নাগরিকের সঙ্গে বিশাল অ্যাজট রাসায়নিক প্ল্যান্টের ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে অবরুদ্ধ হয়ে ছিল।
ইন্টারফ্যাক্স এক রিপোর্টে জানিয়েছে, শনিবার এক বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রতিনিধি ইভান ফিলিপোনেঙ্কো জানান তার বাহিনী রাতে কারখানা থেকে ৮০০ বেসামরিক লোককে সরিয়ে নিয়েছে।
এলভিভ অঞ্চলের গভর্নর ম্যাকসিম কোজিটস্কি বলেন, প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পশ্চিমের কৃষ্ণ সাগর থেকে ছোঁড়া চারটি রাশিয়ান ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইয়ারোভিভে একটি ‘সামরিক স্থাপনায়’ আঘাত করে।
তিনি নির্দিষ্ট কোনো সামরিক স্থাপনার উল্লেখ করেননি। তবে ইয়ারোভিভে একটি বিশাল সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য যেটি ব্যবহৃত হয়। এসব যোদ্ধাদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করছে এমন বিদেশিরাও রয়েছেন।
এর আগে মার্চ মাসে ইয়ারোভিভ ঘাঁটিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৫ জন নিহত হয়।
আঞ্চলিক গভর্নর ভিটালি বুচেনকো বলেছেন, শনিবার সকালে মধ্য ইউক্রেনের জাইটোমির অঞ্চলে প্রায় ৩০টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, এতে একজন ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সব হামলাই ছিল সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারের অবসান
রিভনে আঞ্চলিক গভর্নর ভিটালি কোভাল বলেছেন, উত্তর-পশ্চিমে, সারনির একটি সার্ভিস স্টেশন ও অটো মেরামত কেন্দ্রে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে;এতে তিনজন নিহত এবং চারজন আহত হয়েছে।
সারনি বেলারুশের সীমান্ত থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
অন্যদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, কৃষ্ণ সাগর উপকূল বরাবর দক্ষিণ ইউক্রেনে, ক্রিমিয়া থেকে ছোড়া ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র বন্দর শহর মাইকোলাইভে আঘাত করেছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, উত্তরে বেলারুশ থেকে চেরনিহিভ অঞ্চলে প্রায় ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, শনিবারের হামলার জন্য রাশিয়ান বোমারু বিমান প্রথমবারের মতো বেলারুশীয় আকাশসীমা ব্যবহার করেছে। এ পদক্ষেপকে ‘ক্রেমলিনের যুদ্ধে বেলারুশকে টেনে আনার প্রচেষ্টা’- হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যুদ্ধে বেলারুশ রুশ সামরিক ইউনিটগুলোকে সাহায্য করছে এবং রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার আগে একটি মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে বেলারুশীয় সেনারা সীমান্ত অতিক্রম করেনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার রাতের ভিডিও ভাষণে বলেন, মস্কো যে যুদ্ধটি পাঁচ দিন স্থায়ী হবে বলে আশা করেছিল, তা পঞ্চম মাসে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: নরওয়েতে বন্দুকধারীর গুলিতে ২ জন নিহত, আহত এক ডজনের বেশি