গাজায় দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিধ্বংসী বিমান হামলার পর স্থলভাগে প্রত্যাশিত ব্যাপক আক্রমণের আগে ‘যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত করতে’ ইসরায়েলি সৈন্য ও ট্যাংকগুলো বৃহস্পতিবার রাতে গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাসের বিরুদ্ধে একটি স্বল্পমাত্রার অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
গাজা উপত্যকায় জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করার পর এই অভিযান চালানো হয়। এতে তারা গাজা উপত্যকায় ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাপক হারে কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
চলতি মাসের শুরুতে (৭ অক্টোবর) দক্ষিণ ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি এলাকায় হামাসের হামলার পর গাজাকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।
গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সরঞ্জাম কমে যাওয়ার কারণে আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসাকর্মীরা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শ্রমিকরা শহরের ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে বের করে আনছে শিশুসহ নিহত ও আহত অনেক বেসামরিক নাগরিকদের।
আরও পড়ুন: গাজার বাসিন্দাদের স্থানান্তর অত্যন্ত বিপজ্জনক: জাতিসংঘ মহাসচিব
হামাস শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যা আগের দিন নিহত ৭০৪ জনের চেয়ে বেশি। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) স্বাধীনভাবে মৃতের সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি এবং বেসামরিক ও যোদ্ধাদের আলাদা করে হিসাব করে না মন্ত্রণালয়।
হামাসের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের হামলায় হামাসের সদস্য নিহত হয়েছে এবং হামাসের সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে অবিরত রকেট হামলা চালিয়ে আসছে।
সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রাতভর অভিযানের সময় সৈন্যরা হামাসের যোদ্ধা, সামরিক অবকাঠামো এবং ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
কয়েক দশক ধরে চলা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মধ্যে গাজায় মৃতের সংখ্যা নজিরবিহীন হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে আগের চারটি যুদ্ধে টিকে থাকা হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে ইসরায়েল যদি প্রত্যাশিত স্থল আক্রমণ শুরু করে, তাহলে আরও বড় সংখ্যায় প্রাণহানি ঘটতে পারে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই সংখ্যার মধ্যে গত সপ্তাহে একটি হাসপাতালে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজার দক্ষিণাঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি
ইসরায়েলি সরকারের মতে, এই লড়াইয়ে ইসরায়েলে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই হামাসের প্রথম হামলায় নিহত বেসামরিক নাগরিক। হামাস গাজায় প্রায় ২২২ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে রেখেছে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জ্বালানি সরবরাহ হ্রাসের বিষয়ে সতর্ক করেছে যে মানবিক সংকট দ্রুত আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
গাজার জনগণ খাদ্য, পানি ও ওষুধও সংকটে ভুগছে। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে, যাদের প্রায় অর্ধেকই জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েল মিশর থেকে অল্প সংখ্যক ট্রাকে সাহায্য নিয়ে প্রবেশ করতে দিয়েছে, কিন্তু জেনারেটরের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সিরিয়া-অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলা, গাজায় পৌঁছেছে ত্রাণের দ্বিতীয় বহর