ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, ইলেকট্রনিক সিগন্যালিং সিস্টেমের ত্রুটির কারণে একটি ট্রেন ভুলভাবে ট্র্যাক পরিবর্তন করায় এই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। রবিবার নয়াদিল্লি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
এরআগে, শুক্রবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে দক্ষিণ তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই যাওয়ার পথে কলকাতার প্রায় ২২০ কিলোমিটার (১৩৭ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে বালাসোর জেলায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী একটি ট্রেন, একটি পণ্যবাহী ট্রেন ও যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয় এবং আরও শতাধিক আহত হয়।
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘কে এটা করেছে এবং কারণ কী তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’
কয়েক দশকের মধ্যে এটি ভারতের সবচেয়ে মারাত্মক রেল দুর্ঘটনার মধ্যে একটি।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, উচ্চগতিসম্পন্ন করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে প্রধান ট্র্যাক লাইনে প্রবেশ করার জন্য একটি সংকেত দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে সিগন্যালটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং ট্রেনটি পরিবর্তে একটি সংলগ্ন লুপ লাইনে প্রবেশ করেছিল; যেখানে এটি একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কোচগুলো অন্য ট্র্যাকে উল্টে যায়, যার ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয় এবং তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
যাত্রীবাহী ট্রেনে মোট ২ হাজার ২৯৬ জন যাত্রী ছিল।
আরও পড়ুন: ভারতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৮০ জনের বেশি নিহত, আহত ৯০০
পণ্য বহনকারী ট্রেনগুলো প্রায়ই পাশের একটি সংলগ্ন লুপ লাইনে পার্ক করা হয়, যাতে একটি পাসিং ট্রেনের জন্য মূল লাইন পরিষ্কার থাকে।
শনিবার সন্ধ্যায় ১৫টি লাশ উদ্ধার করা হয় এবং রাতভর ভারি ক্রেন ব্যবহার করে একটি ইঞ্জিন অপসারণের প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।
ওড়িশার ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিসের মহাপরিচালক সুধাংশু সারঙ্গি বলেছেন, ইঞ্জিনে কোনও লাশ পাওয়া যায়নি এবং রবিবার সকালে উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে।
মোদি শনিবার ত্রাণ তৎপরতা পরীক্ষা করতে এবং উদ্ধার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তিনি একটি হাসপাতালও পরিদর্শন করেন, যেখানে তিনি আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কিছু রোগীর সঙ্গেও কথা বলেন।
মোদি সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কষ্ট তিনি অনুভব করছেন।
তিনি বলেন, সরকার তাদের সাহায্য করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে এবং দায়ীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
একটি ট্রেনের ১০ থেকে ১২টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায় এবং কিছু বিধ্বস্ত কোচের ধ্বংসাবশেষ পাশের আরেকটি ট্র্যাকের উপর পড়ে।
রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেছেন, বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে আরেকটি পণ্যবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। যার ফলে দ্বিতীয় ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছিল।
আরও পড়ুন: এক নজরে ভারতের সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রাণঘাতী ট্রেন দুর্ঘটনা
রেল নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভারতে প্রতিবছর কয়েকশো ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় মানবিক ত্রুটি বা সেকেলে সিগন্যালিং যন্ত্রপাতিকে।
১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসে নয়াদিল্লির কাছে দুটি ট্রেন সংঘর্ষে ৩৫৮ জন মারা যায়, এটি ভারতের সবচেয়ে খারাপ ট্রেন দুর্ঘটনা।
২০১৬ সালে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ইন্দোর ও পাটনা শহরের মাঝামাঝি একটি জায়গায় লাইনচ্যুত হয়ে ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
প্রতিদিন ভারতজুড়ে ১২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ১৪ হাজার ট্রেনে চড়ে ৬৪ হাজার কিলোমিটার (৪০ হাজার মাইল) পথ ভ্রমণ করে।
আরও পড়ুন: ভারতে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে ২৩৩ জন নিহত, ৯ শতাধিক মানুষ আহত