২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ জন পরিবেশ ও ভূমি প্রতিরক্ষাকর্মী নিহত হয়েছে। এরমধ্যে মেক্সিকোতেই ৫৪ জন নিহত হয়েছেন। বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের বার্ষিক প্রতিবেদনে সবচেয়ে মারাত্মক দেশের অবস্থানে নেমে এসেছে দেশটি।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী লাতিন আমেরিকায় তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এরমধ্যে কলম্বিয়া, ব্রাজিল এবং নিকারাগুয়াতেও মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
মেক্সিকোর জন্য নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির এটি ছিল টানা তৃতীয় বছর যেখানে ২০২০ সালে নিহত হয়েছিল ৩০ জন কর্মী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘এই অপরাধগুলোর বেশিরভাগই এমন জায়গায় ঘটে যেগুলো নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে এবং অনেক উপায়ে সবচেয়ে কম ক্ষমতার অধিকারীদের ওপর আঘাত করা হয়।’
আরও পড়ুন: সাভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬ বছরের কিশোর নিহত
গ্লোবাল উইটনেস তার প্রতিবেদনটিকে একটি ভিত্তিরেখা ধরে উল্লেখ করে ‘হত্যার বিষয়ে আমাদের তথ্য একটি অবমূল্যায়ন হতে পারে, এই কারণে যে অনেক হত্যার প্রতিবেদন করা হয়নি, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল এবং বিশেষ দেশগুলোর।’
ক্ষতিগ্রস্তরা সম্পদ শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জমি সংক্রান্ত বিরোধে মারা গেছে। খনন নিয়ে দ্বন্দ্বে বিশ্বব্যাপী ২৭ জনের মৃত্যু হয়, যা অন্য যে কোনো সেক্টরের জন্য সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, খনন সংক্রান্ত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ১৫টিই মেক্সিকোতে সংঘটিত হয়েছে।
২০২১ সালের এপ্রিলে পশ্চিম মেক্সিকো রাজ্য জালিস্কোতে, হোসে সান্তোস আইজ্যাক শ্যাভেজকে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি স্থানীয় অফিসের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন এবং দীর্ঘকাল ধরে চলমান খনি তার প্রচারণার মূল বিষয় ছিল। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে, তাকে তার গাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, যেটিকে একটি পাহাড় থেকে ফেলে দেয়া হয়েছিল এবং তার শরীরে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অস্ত্রধারীরা তাকে বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে তার নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: করতোয়ায় নৌকাডুবি: নিহত বেড়ে ৬৯
দক্ষিণ-পশ্চিম কলম্বিয়ার আদিবাসী গভর্নর সান্দ্রা লিলিয়ানা পেনা চকু, যিনি ক্যালডোনো ককাতে কোকা ফসল নির্মূলের জন্য লড়াই করেছিলেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে তাকে তার বাড়ির কাছে সশস্ত্র লোকরা হত্যা করেছিল। তার হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, বেসরকারি সংস্থা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার।
সামগ্রিকভাবে কলম্বিয়ায় পরিবেশ কর্মীদের হত্যার সংখ্যা ২০২১ সালে ৩৩-এ নেমে এসেছে যা আগের বছর ছিল ৬৫। ফিলিপাইন ২০২১ সালেও এমন কম হত্যাকাণ্ড দেখেছিল, ২০২০ সালে ৩০টি থেকে নেমে এসেছে ১৯টিতে।
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো’র তথ্যমতে আটজনকে ভিরুঙ্গা জাতীয় উদ্যানের ভিতরে হত্যা করা হয়েছিল।
ধারণা করা হয়, এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ১০০ জন ভারী সশস্ত্র প্রাক্তন সদস্যের হামলায় নভেম্বরে কনজারভেশন পার্ক রেঞ্জার চিফ ব্রিগেডিয়ার এতিয়েন মুতাজিমিজা কন্যারুচিনিয়া (৪৮) নিহত হন। তারা কঙ্গোর উত্তর কিভু প্রদেশের বুকিমা গ্রামের কাছে একটি টহল পোস্টে আক্রমণ করেছিল।
ভিরুঙ্গা পার্ক বিশ্বের শেষ কিছু পর্বতীয় গরিলাদের আবাসস্থল, কিন্তু সশস্ত্র দল যেমন ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস ফর দ্য লিবারেশন অর রুয়ান্ডা, যার ফরাসি সংক্ষিপ্ত নাম এফডিএলআর নামে পরিচিত। মাই-মাই এবং এম২৩ পূর্ব কঙ্গোর প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত লড়াই করে।
গ্লোবাল উইটনেস সরকারগুলোকে অ্যাক্টিভিস্টদের সুরক্ষা দিতে আইন প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছে। এবং আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে অবহিত সম্মতি প্রয়োজন। পাশাপাশি সংস্থাগুলোকে তাদের বিশ্বব্যাপী ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে এবং ভূমি রক্ষাকারীদের ওপর আক্রমণের জন্য সহনশীলতা শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।
গ্লোবাল উইটনেস-এর সিইও মাইক ডেভিস প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘কর্মী এবং সম্প্রদায়গুলো পরিবেশগত পতনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার প্রথম ধাপ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেইসঙ্গে এটি প্রতিরোধের প্রচারাভিযানে অগ্রগামী’।
আরও পড়ুন: ভারতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৮, আহত ২৫