দীর্ঘ দুই যুগ পর অটোমেশনের আওতায় এলো বেনাপোল স্থলবন্দর। গত দু’বছর ধরে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের পর পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়েছে এই অটোমেশন সেবা। আজ সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অটোমেশন কার্যক্রমের সুফল পেতে শুরু করবে ব্যবসায়ীরা।
১৯৭২ সালে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে প্রথম শুরু হয় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রথম ধাপে নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে বেনাপোল কাস্টম হাউসে শুরু হয় অটোমেশন পদ্ধতি। তবে বন্দরে অটোমেশন না থাকায় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বন্দরের সকল কার্যক্রম চালু থাকায় নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে বন্দরের কার্যক্রম।
আরও পড়ুন: ভারতের উপহার `লাইফসাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স’ বেনাপোল বন্দরে
ব্যবসায়ীদের দাবিতে বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১৯ সালে জুন মাসে বেনাপোল বন্দরে শুরু হয় পরীক্ষামূলক অটোমেশন কার্যক্রম। চলতি মাসের শেষ দিকে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন সেবা চালু হয়। বন্দরের প্রশাসনিক ভবন, রাজস্ব দপ্তর, এন্টি শাখা, কার্গো শাখাসহ বিভিন্ন স্থানে অটোমেশন পদ্ধতিতে কার্য ক্রম শুরু হয়।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের অটোমেশনের সাথে বন্দরের অটমেশনের কানেকটিভিটি দেয়ায় আমদানি পণ্য বন্দরে প্রবেশ থেকে শুরু করে রাজস্ব পরিশোধ পর্যন্ত সবধরনের তথ্য নজরদারিতে থাকছে কর্তৃপক্ষের।
ব্যবসায়ীরাও ঘরে বসেই তাদের পণ্যের অবস্থান ও খালাস প্রক্রিয়া জানতে পারছেন অনলাইনে। আমদানি ও রপ্তানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক বন্দর এলাকায় প্রবেশের পর ডিজিটাল স্কেলে পণ্যের সঠিকতা নিরূপণ, ট্রাকের অবস্থান, বন্দরের শেডে পণ্য আনেলোডের স্থান ভারতীয় খালি ট্রাক ফিরে যাওয়ার যাবতীয় তথ্য অটোমেশনের আওতায় থাকেছে।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। আমদানি বাণিজ্য থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয় সরকারের। বন্দরে সিসি ক্যামেরা ও অটোমেশন চালু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেনাপোল দিয়ে ভারতে গেলো ২০৯ মেট্রিক টন ইলিশ
ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কামর্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, আমদানি পণ্যের তথ্য আগে ম্যানুয়ালি খাতা কলমে এন্ট্রি করে তথ্য মজুদ করা হতো। অটোমেশন চালু হওয়ায় প্রতিটি কাজ দ্রুত ও স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন হচ্ছে, এটাই ছিল ব্যবসায়ীরেদ দীর্ঘদিনের দাবি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, কাস্টমসের পাশাপাশি বন্দরে অটোমেশন চালু হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি ও স্বচ্ছতা ফিরে এসছে। আমদানিকারকরা ইচ্ছে করলে নিজেরা ঘরে বসে আমদানির তথ্য মোবাইলে জানতে পারবেন।
আরও পড়ুন: বেনাপোল দিয়ে আরও ২০০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন আমদানি
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক আব্দুল জলিল জানান, দীর্ঘদিন পর হলেও বেনাপোল বন্দরে প্রথম অটোমেশনে চালু হলো। এতে করে বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে। ইন্টারনেটে গুগলক্রমে আমদানিকৃত পণ্যের মেনিফেস্ট নম্বর এন্ট্রি দিয়ে বন্দরের ওয়েভ অ্যাড্রেসে গেলেই তার পণ্যের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারবেন আমদানিকারকরা।