বেনাপোল বন্দরের সাথে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানির বাণিজ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে থাকেলেও বন্দরের অব্যবস্থাপনা ও বেহাল দশা নিয়ে এতোদিন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ দেখিয়ে আসলেও এবার দুদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ভারতীয় ট্রাক চালকরা।
তবে, বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি দুদেশের বাণিজ্য বাড়াতে বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছেন। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্যে গতি ফিরবে।
সোমবার ভারতীয় ট্রাক চালকদের বাণিজ্য বন্ধের হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন।
জানা যায়, স্বাধীনতার পড়ে ১৯৭২ সালে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের দিয়ে দুদেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়। এ বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় শুরু থেকেই এ পথে পণ্য আনা নেয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়ে আসছে। সেই সাথে কিছুদিন পরপর রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে ব্যবসায়ীদের অনেকে সর্বস্বান্ত হতে দেখা গেছে।
এছাড়া, জায়গার অভাবে দিনের পর দিন পণ্য নিয়ে বন্দরে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় ব্যবসায়ীদের লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশিয় আমদানি পণ্যের বাজারের উপর। অথচ এ বন্দর থেকে প্রতিবছর সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হয়।
ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ জানিয়ে ভারতের পেট্রাপোলের বনগাঁ মোটরশ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন আল্টিমেটাম দিয়েছে। তারা জানিয়েছে দ্রুত পণ্য খালাসসহ অব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধান না হলে সোমবার থেকে তারা বেনাপোল বন্দরে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিবেন। তাদের হুমকিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, সুষ্ঠু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরে সমস্যার অন্ত নাই। বন্দরের জায়গার অভাব ও পণ্য খালাসের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ায় তারা সময়মত পণ্য নিতে পারছেন না। অথচ এ বন্দর থেকে প্রতিবছর তারা সরকারকে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিচ্ছেন। বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পথে বসছেন ব্যবসায়ীরা। দিনের পর দিন খালাসের অপেক্ষায় ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় আমদানি খরচ বাড়ছে।
সন্তোষজনক সমাধানের মাধ্যমে যাতে বাণিজ্য সচল থাকে তার জন্য আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ভারতীয়রা বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ পথে বাণিজ্য বন্ধের যে হুমকি দিয়েছেন তার যৌক্তিকতা আছে। বেনাপোল বন্দরের উন্নয়ন নিয়ে সংশিষ্টদের কোনো মাথা ব্যথা নাই। বন্দরের ধারণক্ষমতা মাত্র ৪০ হাজার মেট্রিক টন। যদিও এ বন্দরে সবসময় ২ লাখ মেট্রিক টন পণ্য থাকে।
অবহেলা অযত্নে খোলা আকাশের নিচে এসব পণ্য বৃষ্টির পানি-কাদাতে ভিজে মান নষ্ট হচ্ছে। বার বার বন্দর কর্তৃপক্ষকে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানানো হলেও নজরদারী কম বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে, বেনাপোল বন্দরকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়ার জোর দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, উন্নয়ন বাড়াতে হলে বন্দরকে নৌপরিবহনের অধীন থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিতে হবে। যা ইতোমধ্যে ভারত সরকার পেট্রাপোল বন্দরে করেছেন।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, ইতিমধ্যে বন্দরের বেশ কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। তবে বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ, পণ্যগার বাড়ানো, চুরি রোধে সিসি ক্যামেরা ও বন্দরের চারপাশে প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।